বায়ুমণ্ডল | বায়ুমণ্ডল প্রশ্ন উত্তর ( মাধ্যমিক ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায়)। দশম শ্রেণির ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর  

Published On:

বায়ুমণ্ডল: আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি দশম শ্রেণি ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় বায়ুমণ্ডল প্রশ্ন উত্তর, মাধ্যমিক ভূগোল বায়ুমণ্ডল প্রশ্ন উত্তর, Class 10 Geography 2nd chapter question in bengali,মাধ্যমিক ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর, বায়ুমণ্ডল প্রশ্ন উত্তর PDF যা আগত মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। (WBBSE) পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক সিলেবাসের অন্তর্গত ভূগোল বিষয়ের মাধ্যমিক ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় বায়ুমণ্ডল সম্পূর্ণ অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করছি। Class X geography first chapter question in bengali

বায়ুমণ্ডল। মাধ্যমিক ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | দশম শ্রেণি ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

‘বায়ুমণ্ডল’ অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

বায়ুমণ্ডল MCQ প্রশ্ন

1.বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ

(a) 20.94 শতাংশ (b) 20.27 শতাংশ (c) 20.86 শতাংশ (d) 20.9৪ শতাংশ

Answer : (a) 20.94 শতাংশ

2.বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্যাসীয় উপাদানটির নাম—

(a) অক্সিজেন (b) নাইট্রোজেন (c) কার্বন ডাইঅক্সাইড (d) ওজোন

Answer : (b) নাইট্রোজেন

3.বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাস _________ স্তরে ঘনীভূত অবস্থায় থাকে

(a) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (b) মেসোস্ফিয়ার (c) ট্রপোস্ফিয়ার (d) আয়নোস্ফিয়ার

Answer : (a) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার

4.ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী সীমাকে বলে—

(a) ট্রপোপজ (b) স্ট্রাটোপজ (c) মেসোপজ (d) আয়নোপজ

Answer : (a) ট্রপোপজ

5.ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে বায়ুমণ্ডল প্রায় কত কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত?

(a) 1000 কিমি (b) 5000 কিমি (c) 10000 কিমি (d) 100000 কিমি

Answer : (c) 10000 কিমি

6.মেসোস্কিয়ার স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা

(a) বাড়ে (b) কমে (c) একই থাকে (d) কোনোটিই নয়

Answer : (b) কমে

7.ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে প্রায় কত কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরটিকে বলে হোমোস্ফিয়ার?

(a) 60 কিলোমিটার (b) 90 কিলোমিটার (c) 120 কিলোমিটার (d) 110 কিলোমিটার

Answer : (b) 90 কিলোমিটার

8.বায়ুমণ্ডলে কী আছে বলে আকাশ নীল দেখায়?

(a) ওজোন (b) অক্সিজেন (c) নাইট্রোজেন (d) ধূলিকণা

Answer : (d) ধূলিকণা

9.বৈপরীত্য উত্তাপ লক্ষ করা যায় বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে সেটি হল

(a) আয়নোস্ফিয়ার (b) ট্রপোস্ফিয়ার (c) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (d) মেসোস্ফিয়ার

Answer : (b) ট্রপোস্ফিয়ার

10.সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে

(a) ওজোন (b) আর্গন (c) জেনন (d) ক্রিপ্টন

Answer : (a) ওজোন

11.বায়ুমণ্ডলে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা হ্রাসের স্বাভাবিক হার হল—

(a) 6.3 ডিগ্রি সে (b) 4.6 ডিগ্রি সে (c) 6.6 ডিগ্রি সে (d) 6.5 ডিগ্রি সে

Answer : (d) 6.5 ডিগ্রি সে

12.স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের হার দেখা যায়—

(a) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে (b) থার্মোস্ফিয়ারে (c) ট্রপোস্ফিয়ারে (d) মেসোস্ফিয়ারে

Answer : (c) ট্রপোস্ফিয়ারে

13.বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেনের শতকরা পরিমাণ

(a) 20.19 শতাংশ (b) 79.09 শতাংশ (c) 78.08 শতাংশ (d) 20.50 শতাংশ

Answer : (c) 78.08 শতাংশ

14.গ্রিনহাউস গ্যাস হল—

(a) অক্সিজেন (b) নাইট্রোজেন (c) কার্বন ডাইঅক্সাইড (d) ওজোন

Answer : (c) কার্বন ডাইঅক্সাইড

15.হোমোস্ফিয়ারের অন্য নাম

(a) বিষমমণ্ডল (b) ক্ষুদ্ধমণ্ডল (c) সমমণ্ডল (d) স্তদ্ধমণ্ডল

Answer : (c) সমমণ্ডল

16.ক্ষুদ্ধমণ্ডল বলা হল

(a) মেসোস্ফিয়ার (b) ট্রপোস্ফিয়ার (c) স্ট্রাটোস্ফিয়ার (d) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার

Answer : (b) ট্রপোস্ফিয়ার

17.আবহাওয়া ও জলবায়ুর নানা ঘটনা ঘটে—

(a) মেসোস্ফিয়ারে (b) আয়নোস্ফিয়ারে (c) স্ট্রাটোস্ফিয়ারে (d) ট্রপোস্ফিয়ারে

Answer : (d) ট্রপোস্ফিয়ারে

18.বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে মহাকাশ থেকে আগত উল্কাপিণ্ড পুড়ে ছাই হয়ে যায়. তার নাম

(a) ট্রপোস্ফিয়ার (b) স্ট্যাটোস্ফিয়ার (c) মেসোস্ফিয়ার (d) আয়োনোস্ফিয়ার

Answer : (c) মেসোস্ফিয়ার

19.অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হয়

(a) মেসোস্ফিয়ারে (b) ট্রপোস্ফিয়ারে (c) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে (d) আয়নোস্ফিয়ারে

Answer : (c) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে

20.ট্রপোস্ফিয়ারে প্রতি কিমি উচ্চতায় উষ্ণতা কত করে হ্রাস পায় ?

(a) 4.6°C (b) 6.4°C (c) 5.2°C (d) 8.4°C

Answer : (b) 6.4°C

21.প্রতি 1,000 ফুট উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বায়ুচাপ কী হারে কমে?

(a) 43 মিলিবার (b) 28 মিলিবার (c) 34 মিলিবার (d) 40 মিলিবার

Answer : (c) 34 মিলিবার

22.ফেরেলের সূত্র প্রতিষ্ঠিত হয় কত খ্রিস্টাব্দে।

(a) 1849 (b) 1859 (c) 1869 (d) 1959

Answer : (b) 1859

23.স্থলবায়ু কোন সময় প্রবাহিত হয় ?

(a) রাত্রিবেলায় (b) অপরাহ্নে (c) ভোরবেলায় (d) দুপুরবেলায়

Answer : (a) রাত্রিবেলায়

24.মেীসুমি বায়ু কোন শ্রেণির বায়ুপ্রবাহ ?

(a) নিয়ত বায়ু (b) স্থানীয় বায়ু (C) সাময়িক বায়ু (d) আকস্মিক বায়ু

Answer : (C) সাময়িক বায়ু

25.টর্নেডো কোন শ্রেণির বায়ুপ্রবাহ ?

(a) নিয়ত বায়ু (b) স্থানীয় বায়ু (c) সাময়িক বায়ু (d) আকস্মিক বায়ু

Answer : (b) স্থানীয় বায়ু

26.কোন্ যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর আর্দ্রতা মাপা হয় ?

(a) অ্যানিমোমিটার (b) রেনগজ (d) বাতপতাকা

Answer : (c) হাইগ্রোমিটার

27.পর্বতের কোন্ ঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয় ?

(a) মৃদু ঢালে (b) প্রতিবাত ঢালে (c) অনুবাত ঢালে (d) কোনোটিই নয়

Answer : (b) প্রতিবাত ঢালে

28.ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব মাপার একক হল

(a) মিলিবার (b) শতকরা (d) ডিগ্রি সেলসিয়াস

Answer : (c) ডবসন

29.বায়ুচাপ মাপার যন্ত্র হল

(a) হাইগ্রোমিটার (b) ব্যারোমিটার (c) অল্টিমিটার (d) থার্মোমিটার

Answer : (b) ব্যারোমিটার

30.প্রতি বর্গসেমি স্থানে প্রমাণ ‘সমুদ্রপৃষ্ঠীয় বায়ুর চাপ’ কত?

(a) 6 কিগ্রা (b) 4 কিগ্রা (c) 2 কিগ্রা (d) 1 কিগ্রা

Answer : (d) 1 কিগ্রা

31.পৃথিবীব্যাপী স্থায়ী চাপ বলয়ের সংখ্যা

(a) 4 টি (b) 3টি (c) 5টি (d) 7টি

Answer : (d) 7টি

32.বায়ুর গতিবেগ মাপার যন্ত্র হল

(a) অ্যানিমোমিটার (b) থার্মোমিটার (c) অল্টিমিটার (d) হাইগ্রোমিটার

Answer : (a) অ্যানিমোমিটার

33.বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ মাপার একক কী?

(a) মিলিবার (b) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (c) অক্টাস (d) নট

Answer : (d) নট

34.বাণিজ্য বায়ু’ বলা হয় কোন নিয়তবায়ুকে?

(b) পশ্চিমা বায়ু (c) মেরু বায়ু (d) সব কটি

Answer : (a) আয়ন বায়ু

35.আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রকাশ করা হয়

(a) গ্রাম হিসেবে (b) কিলোগ্রাম হিসেবে (c) শতকরা হিসেবে (d) দশমাংশ হিসেবে

Answer : (c) শতকরা হিসেবে

36.অ্যালবেডোর পরিমাপ করা হয় কোন্ যন্ত্রের সাহায্যে?

(a) অ্যানিমোমিটার (b) হাইগ্রোমিটার (c) অ্যালবিডোমিটার (d) বাতপতাকা

Answer : (c) অ্যালবিডোমিটার

37.মেঘাচ্ছন্নতা পরিমাপ করার একক হল

(a) নট (b) অক্টাস (C) সেমি (d) গ্রাম

Answer : (b) অক্টাস

38.সীমান্ত বৃষ্টি হয় কোন্ ধরনের ঘূর্ণবাতে?

(a) নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতে (b) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতে (c) প্রতীপ ঘূর্ণবাতে (d) সব ক-টি

Answer : (a) নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতে

39.বায়ুর শক্তির মাত্রা নির্ণয় করা হয় কোন্ স্কেলের সাহায্যে?

(a) রিখটার স্কেল (b) বিউফোর্ট স্কেল (c) মার্কালি স্কেল (d) কোনটিই নয়

Answer : (b) বিউফোর্ট স্কেল

40.40° দক্ষিণ অক্ষরেখায় সাহসী পশ্চিমা বায়ু কী নামে পরিচিত?

(a) গর্জনশীল চল্লিশা (b) ভয়ংকর পঞ্চাশ (c) তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট (d) সবকটি

Answer : (a) গর্জনশীল চল্লিশা

বায়ুমণ্ডল 1 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর [একটি বাক্যে উত্তর দাও]

1.বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তরটির নাম কী?

Answer : ম্যাগনেটোস্ফিয়ার

2.বায়ুমণ্ডলের কোন্ গ্যাস অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে?

Answer : ওজোনস্তর

3.ট্রপোস্ফিয়ার স্তরটির নামকরণ কে করেন?

Answer : বিজ্ঞানী টিসেরেনি ডি বোর্ট

4.বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরে চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে?

Answer : ম্যাগনেটোস্ফিয়ার

5.ITCZ-এর পুরো নাম কী?

Answer : Inter Tropical Convergence Zone

6.কোন যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর চাপ মাপা যায় ?

Answer : ব্যারোগ্রাফ

7.কোন যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর উষ্ণতা মাপা হয়?

Answer : থার্মোগ্রাফ

8.CFC-এর পুরো নাম কী?

Answer : ক্লোরোফ্লুরোকার্বন

9.কোন্ যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর দিক নির্ণয় করা হয় ?

Answer : বাতপতাকা

10.পৃথিবীর সর্বাধিক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের নাম কী?

Answer : টর্নেডো

11.পাঞ্জাব ও রাজস্থানের ধুলিঝড় কী নামে পরিচিত?

Answer : আঁধি

12.বায়ুপ্রবাহের জন্য দায়ী কোন্ বল?

Answer : কোরিওলিস বল

13.পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের বিধ্বংসী ঝড় কী নামে পরিচিত?

Answer : হ্যারিকেন

14.বিমানে বায়ুর চাপ মাপা হয় কোন্ যন্ত্রের সাহায্যে ?

Answer : অল্টিমিটার

15.ফন্ কোথায় প্রবাহিত হয়?

Answer : রাইন নদী উপত্যকায়

16.বৃষ্টিপাত পরিমাপক যন্ত্রের নাম কী?

Answer : রেনগেজ

শূন্যস্থান পূরণ করো :-

1._______ স্তরকে শান্তমণ্ডল বলে।

Answer : স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার

2.ক্ষুব্ধমণ্ডল_______ স্তরকে বলে।

Answer : ট্রপোস্ফিয়ার

3.আর্গন একপ্রকার _______গ্যাস।

Answer : নিষ্ক্রিয়

4.প্রধানত_______ গ্যাস ওজোনস্তর ধ্বংসের জন্য দায়ী।

Answer : ক্লোরোফ্লুরোকার্বন

5._______অঞ্চলে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বেশি।

Answer : নিরক্ষীয়

6.বায়ুর ঘনত্ব বাড়লে চাপ _____।

Answer : বাড়ে

7._______যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর উষ্ণতার প্রসর মাপা হয়।

Answer : লঘিষ্ঠ ও গরিষ্ঠ থার্মোমিটার

৪. বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে বায়ুর চাপ_______ ।

Answer : কমে

9.লু একপ্রকার _______বায়ু।

Answer : স্থানীয়

10.চিন সাগরে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় _______ নামে পরিচিত।

Answer : টাইফুন

11._______ বায়ুকে সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর বৃহৎ সংস্করণ বলে।

Answer : মৌসুমি

12.সম্পৃক্ত বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা _______শতাংশ হয়।

Answer : 100

13.ঘূর্ণবাতের নিম্নচাপবিশিষ্ট কেন্দ্রকে ঘূর্ণবাতের _______ বলে।

Answer : চক্ষু

14.50° দক্ষিণ অক্ষরেখায় পশ্চিমা বায়ুকে বলা হয় _______।

Answer : ভয়ংকর পঞ্চাশ

15.বৃষ্টিচ্ছায় অঞল পর্বতের _______ঢালে অবস্থান করে।

Answer : অনুবাত

16.‘তুষারভক্ষক বায়ু’ বলে_______ কে।

Answer : চিনুক

17.‘Doctor of wind’ বলে _______বায়ুকে।

Answer : হারমাট্টন

18.1939 খ্রিস্টাব্দে জার্মান আবহবিদ _______ জেট বায়ুপ্রবাহের নামকরণ করেন।

Answer : হাইনরিখ সিলকোফ

19.60° দক্ষিণ অক্ষরেখায় পশ্চিমা বায়ুকে বলা হয় _______।

Answer : তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট

20.সমচাপরেখাগুলি যত ঘনসন্নিবিষ্ট হয়, বায়ুচাপের পার্থক্য তত _______হয়।

Answer : বেশি

দশম শ্রেণির ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় 2 নং প্রশ্ন উত্তর / মাধ্যমিক ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় 2 নং প্রশ্ন উত্তর

1.বায়ুমণ্ডল কাকে বলে?

Ans:- বায়ুমন্ডল হলো পৃথিবীর চারপাশ থেকে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রিত স্তর যা মধ্যকর্ষণের মাধ্যমে পৃথিবী ধরে রাখে। সহজ ভাষায় বললে পৃথিবীকে বেষ্টন করে যে বায়বীয় পদার্থের আবরণ রয়েছে তাকে বায়ুমন্ডল বলে।

2.অ্যারোসল কী?

Ans:- হল বায়ু বা অন্য কোন গ্যাসে সূক্ষ্ম কঠিন কণা বা তরল ফোঁটার সাসপেনশন। অ্যারোসল প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট হতে পারে। প্রাকৃতিক অ্যারোসলের উদাহরণ হল কুয়াশা, ধুলো, বন উচ্ছ্বাস এবং গিজার বাষ্প। মানবসৃষ্ট অ্যারোসলের উদাহরণ হল বায়ু দূষণ এবং ধোঁয়া। তরল বা কঠিন কণার ব্যাস সাধারণত 1 èm এর কম; একটি উল্লেখযোগ্য নিষ্পত্তি গতি সঙ্গে বৃহত্তর কণা মিশ্রণ একটি সাসপেনশন তৈরি করে, কিন্তু পার্থক্য পরিষ্কার-কাটা নয়। সাধারণ কথোপকথনে, এরোসল সাধারণত একটি এরোসল স্প্রে বোঝায় যা একটি ক্যান বা অনুরূপ ধারক থেকে একটি ভোক্তা পণ্য সরবরাহ করে। এরোসলের অন্যান্য প্রযুক্তিগত প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে কীটনাশক ছত্রভঙ্গ করা, শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার চিকিৎসা, এবং দহন প্রযুক্তি। রোগ এছাড়াও শ্বাস মধ্যে ছোট ফোঁটা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এছাড়াও এরোসল (বা কখনও কখনও বায়োএরোসল) বলা হয়।

3.ট্রপোপজ কাকে বলে?

Ans:- ট্রপোস্ফিয়ার এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এই দুই বায়ুস্তরের সীমা নির্দেশক সংযোগকারী উপস্তরকে ট্রপোপজ বলে । ট্রপোস্ফিয়ারের বায়ুস্তর এই অঞ্চলে এসে থেমে যায়, তাই একে ট্রপোপজ বলে । গ্রীক শব্দ “Tropos” এর অর্থ ‘পরিবর্তন’ ও “Pause” এর অর্থ ‘থেমে যাওয়া

4.স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারকে শান্তমণ্ডল বলে কেন?

Ans:- ট্রোপােস্ফিয়ারের উপরে উপস্থিত এবং ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 12 কিমি থেকে 45 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরটিকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বলে। এই অঞ্চলে বায়ুর পরিমাণ খুবই কম এবং ধূলিকণা, জলকণা না থাকায় মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি, প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটে না। তাই এই অঞ্চলের নাম শান্তমণ্ডল।

5.ট্রপোস্ফিয়ারকে ক্ষুব্বমণ্ডল বলে কেন?

Ans:- ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুমন্ডলের সবথেকে নিচের স্তর বা ভূপৃষ্ঠ থেকে সবথেকে নিম্নতম স্তর। তাই এই স্তরের বায়ু সর্বদা গতিশীল, এবং প্রতিনিয়ত জলবায়ুর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এখানে বায়ুতে ধূলিকণা জলীয় বাষ্প মেঘ ইত্যাদি থেকে ঝড়-বৃষ্টি বজ্রপাত ইত্যাদি ঘটনাগুলি ঘটতে দেখা যায়, তাই একে ক্ষুব্ধমন্ডল বলা হয়

6.তাপ বিষুবরেখা কাকে বলে?

Ans:- তাপীয় বিষুবরেখা পৃথিবীর সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রার অঞ্চল , হয় বার্ষিক বা দীর্ঘমেয়াদী গড় বা একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে। দীর্ঘমেয়াদী গড়ে, এটি প্রায় 5°N অক্ষাংশে অবস্থিত। ভৌগোলিক বিষুবরেখার উত্তরে অবস্থিত এই অবস্থানটি দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় উত্তর গোলার্ধের সাধারণত বরং উচ্চ তাপমাত্রার ফলে; এর কারণ হল হিমবাহী অ্যান্টার্কটিক মহাদেশ উত্তর গোলার্ধে অনেক ছোট ভূমি এলাকা সহ আর্কটিকের তুলনায় দক্ষিণ গোলার্ধে শীতল গ্রীষ্ম বজায় রাখে।

7.ইনসোলেশন কী?

Ans:- পৃথিবীর পৃষ্ঠ দ্বারা প্রাপ্ত শক্তির বেশিরভাগই স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যে। পৃথিবী সূর্য থেকে যে শক্তি পায় তাকে ইনসোলেশন বা ইনকামিং সোলার রেডিয়েশন বলে। সূর্যের রশ্মি বায়ুমণ্ডলের শীর্ষে তির্যকভাবে পড়ে কারণ গ্রহটি একটি জিওয়েড, এবং পৃথিবী সূর্যের শক্তির সামান্য অংশই দখল করে।

8.কোরিওলিস বল কী?

Ans:- কোরিওলিস বল হল একটি জড় (বা কাল্পনিক) বল যা গতিশীল বস্তুর উপর একটি রেফারেন্স ফ্রেমের মধ্যে কাজ করে যা একটি জড় ফ্রেমের সাপেক্ষে ঘোরে। ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘূর্ণন সহ একটি রেফারেন্স ফ্রেমে, বল বস্তুর গতির বাম দিকে কাজ করে। ঘূর্ণনের বিপরীত দিকে (বা ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে) একটিতে, বল ডানদিকে কাজ করে।

9.জিওস্ট্রোফিক বায়ু কী?

Ans:- ঊর্দ্ধাকাশে সমচাপরেখার সাথে সমান্তরালভাবে বায়ু প্রবাহিত হয় । এইপ্রকার বায়ুপ্রবাহ জিওস্ট্রফিক বায়ু (Geostrophic Wind) নামে পরিচিত 

10.স্থানীয় বায়ু কাকে বলে?

Ans:- ভূপৃষ্ঠের একটি নির্দিষ্ট স্থানে যখন ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা, শিলার প্রকৃতি, উদ্ভিদের আচ্ছাদন, বায়ুর উষ্ণতা প্রভৃতির তারতম্যে থানীয়ভাবে বায়ুচাপের। তারতম্য হয়, তখন সেখানকার উচ্চচাপ এলাকা থেকে নিম্নচাপ এলাকার দিকে এক ধরনের বায় প্রবাহিত হয়। স্থানীয় কারণে উৎপত্তি হয় বলে এদের স্থানীয় বায়ু বলা হয়। বায়ুর প্রকৃতি অনুসারে স্থানীয় বায়ুকে দুভাগে ভাগ করা যায়—উষ্ণ বায়ু এবং শীতল বায়ু।

11.চিনুক কী?

Ans:- চিনুক হল একপ্রকারের স্থানীয় বায়ু। বসন্তকালে উত্তর আমেরিকার রকি পার্বত্য অঞ্চলের পূর্ব ঢাল থেকে প্রেইরি অঞ্চলের দিকে যে উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে চিনুক বলে। 

12.ক্যাটাবেটিক বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে?

Ans:- রাতের বেলা পর্বতের উচ্চ অংশের বায়ু তাপ বিকিরণ করে শীতল ও ভারী হয়ে পর্বতের ঢাল বরাবর নিচে নামতে থাকলে তাকে ক্যাটাবেটিক বায়ু বলে। 

13.অ্যানাবেটিক বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে?

Ans:- দিনের বেলা পর্বতের নিম্ন উপত্যকার বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হলে তাকে অ্যানাবেটিক বায়ু বলে।

14.স্থলবায়ু কী?

Ans:- উষ্ণ বাতাস কম ঘন, এটি প্রসারিত হয় এবং স্থলভাগের উপর একটি নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়, অন্যদিকে সমুদ্রের উপর তুলনামূলকভাবে উচ্চ-চাপ থাকে। চাপের পার্থক্যের কারণে বায়ু সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় যা সমুদ্র বায়ু এবং রাত্রিতে এই ঘটনার বিপরীত, স্থলবায়ু হিসাবে পরিচিত।

15.সমুদ্রবায়ু কী?

Ans:- দিনের বেলায় সূর্যকিরণে তীরবর্তী স্থলভাগ সমুদ্রের পানি অপেক্ষা শীঘ্র ও অধিক উত্তপ্ত হয় এবং সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় । এই সময় বায়ুর চাপের সমতা রক্ষার জন্য সমুদ্র থেকে শীতল ও উচ্চচাপ বিশিষ্ট বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় । এই বায়ুই সমুদ্রবায়ু ।

16.জেট বায়ু কী?

Ans:- উষ্ণ ও শীতল বায়ুর মিলন স্থলে জেট বায়ু গঠিত হয়। এর সাথেই তিব্বত ও পূর্ব চিন উষ্ণ থাকার ফলে নিম্নচাপ বিরাজ করে এবং বঙ্গপসাগর অঞ্চলে উচ্চচাপ বিরাজ করে। ফলে একটি চক্ররাকার বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি করে। তখন তাকে জেট বায়ু বলা হয়।

17.ঘূর্ণবাতের চক্ষু কী?

Ans:- শক্তিশালী ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে এক গতিহীন, শান্তপ্রায় মেঘশূন্য অবস্থা বিরাজ করে। একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বা ঝড়ের চক্ষু বলে। এর ব্যাস প্রায় ১০ কিমি থেকে 20 কিমি বিস্তৃত। ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের চক্ষুর চারিদিকে নিথোস্ট্রাটাস মেঘের আন্তরণ থাকে। একে ঝড়ের চক্ষু প্রাচীর বলে।

18.জলচক্র কাকে বলে?

Ans:- জল বায়ুমণ্ডল থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠে, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে আবর্তিত হয়। জলের এই বিরামহীন চক্রাকার আবর্তনকে জলচক্র বলে।

19.মৌসুমি বায়ু কাকে বলে?

Ans:- সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে মৌসুমী বায়ু গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ – পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় এবং শীতকালে তা অভিমুখ পরিবর্তন করে উত্তর – পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয় । বায়ুচাপ ও বায়ুর উষ্ণতার পার্থক্যের ফলে বছরের নির্দিষ্ট ঋতুতে নির্দিষ্ট দিক থেকে প্রবাহিত ও নির্দিষ্ট অভিমুখে ধাবিত বায়ুপ্রবাহকে মৌসুমী বায়ু বলে

20.ঘূর্ণবাত কাকে বলে?

Ans:- কোনো স্বল্প পরিসর স্থান কোনো কারণে হঠাৎ উষ্ণ হলে গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। বায়ুচাপের সমতা রক্ষা করার জন্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বায়ু প্রবল বেগে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয় এবং কালক্রমে উর্দ্ধগামী হয়। এই বায়ু কে ঘূর্নবাত বলে।

21.ফেরেলের সূত্র কাকে বলে?

Ans:- বায়ু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে সোজাভাবে প্রবাহিত হওয়ার কথা। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে উচ্চচাপ অঞ্চলের থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে বায়ু সোজাভাবে প্রবাহিত হয় না। এ নিয়ে বিজ্ঞানী ফেরেল যে সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন তাকে সূত্র ফেরেলের সূত্র বলা হয়।

22.ITCZ কী?

Ans:- উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর মিলন অঞ্চলকে আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল বা ITCZ বলে। ITCZ এর পুরো নাম ইন্টার ট্রপিক্যাল কনভারজেন্ট জোন। পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর এই রকম তিনটি আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল অবস্থিত

23.আয়নবায়ুকে বাণিজ্য বায়ু বলে কেন?

Ans:- আয়ন বায়ুর গতিবেগ ও গতিপথ উভয়ই নিয়মিত হওয়ায় প্রাচীনকালে পালতোলা জাহাজের সাহায্যে এই আয়ন বায়ুকে কাজে লাগিয়ে উভয় গোলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে সমুদ্রপথে ব্যবসা-বানিজ্য চলতো। সেইজন্য এই বায়ু ব্যবসা-বানিজ্যের সহায়ক বলে বানিজ্য বায়ু (Trade Winds) নামকরণ করা হয়েছে

25.গর্জনশীল চল্লিশা কাকে বলে?

Ans:- দক্ষিণ গোলার্ধে ৪০° দক্ষিণ অক্ষাংশের পর জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ অনেক কম থাকায় বায়ুপ্রবাহের গতির ওপর পাহাড় পর্বতের ঘর্ষণজনিত বাধা অনেক কম হয়। এজন্য দক্ষিণ গোলার্ধের বিস্তৃত জলভাগের ওপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু ৪০°-৬০° অক্ষাংশের মধ্যে সারা বছর বাধাহীনভাবে, প্রবলবেগে এবং সশব্দে প্রায় সোজা পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। এইজন্য ৪০°-৬০° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ুকে গজনশীল চল্লিশা বলে।

26.বায়ুচাপ কক্ষ কী?

Ans:- সমুদ্রের ওপর বায়ুচাপ বলয়গুলি যতটা স্পষ্ট , মহাদেশের ওপর ততটা নয় । মহাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য বেশি বলে বলয়গুলি ভেঙে ছোটো ছোটো কোশ আকারে অবস্থান করে । এগুলিকেই বায়ুচাপ কক্ষ বলা হয় ।

27.ডোলড্রাম কী?

Ans:- এই বলয়টি নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে 10º উ এবং 10º দ অক্ষাংশে প্রসারিত হয়। অতিরিক্ত গরম হওয়ার কারণে এখানে বায়ুর অনুভূমিক চলাচল অনুপস্থিত এবং কেবল পরিচলন প্রবাহ রয়েছে। অতএব পৃষ্ঠের বাতাসের অপার্থিব অনুপস্থিতির কারণে এই বলয়টিকে ডলড্রামস (শান্তির অঞ্চল) বলা হয়

28.এল-নিনো কী?

Ans:- যখন তাহিতি এবং ডারউইনে অস্ট্রেলিয়ার বায়ুমণ্ডলে চাপের পরিবর্তন সংঘটিত হয় তখন এবং যখন পেরু ও ইকুয়েডর এর পশ্চিম উপকূল থেকে অস্বাভাবিক গরম অথবা ঠান্ডা সামুদ্রিবস্থা বিরাজ করে তখন।

29.অধঃক্ষেপণ কাকে বলে?

Ans:- বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট জলকণা ও তুষারকণা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে যখন ভূপৃষ্ঠে ঝরে পড়ে, তখন তাকে অধঃক্ষেপণ বলে। উদাহরণ: বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি। অধঃক্ষেপণের শ্রেণিবিভাগ: অধঃক্ষেপণ মূলত দুই রূপে হয়– জলরূপে বা তরলরূপে এবং বরফ রূপে বা কঠিন রূপে।

দশম শ্রেণির ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় 3 নং প্রশ্ন উত্তর / মাধ্যমিক ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় 3 নং প্রশ্ন উত্তর

1.ট্রপোস্ফিয়ারের গুরুত্ব কী?

Ans:- ট্রপোস্ফিয়ার হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর, যা অবস্থান এবং ঋতুর উপর নির্ভর করে পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা প্রায় 7 থেকে 17 কিলোমিটার (4 থেকে 10 মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার মধ্যে কয়েকটি হল:

আবহাওয়া এবং জলবায়ু : ট্রপোস্ফিয়ার হল যেখানে বেশিরভাগ আবহাওয়ার ঘটনা ঘটে। এটি এমন একটি স্তর যেখানে তাপমাত্রা উচ্চতার সাথে হ্রাস পায়, যা পরিচলন স্রোত এবং আবহাওয়ার ধরণ তৈরি করে। মেঘ গঠন, বৃষ্টিপাত এবং বেশিরভাগ বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনা এই স্তরে ঘটে। পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বিনিময় : ট্রপোস্ফিয়ার হল যেখানে সালোকসংশ্লেষণ এবং শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠের মধ্যে বেশিরভাগ অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বিনিময় ঘটে। এই বিনিময় পৃথিবীতে জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য অত্যাবশ্যক।

সৌর বিকিরণ থেকে সুরক্ষা : ট্রপোস্ফিয়ার সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী (UV) বিকিরণ থেকে পৃথিবীর পৃষ্ঠকে শোষণ করে এবং এর একটি অংশকে বিক্ষিপ্ত করে রক্ষা করতে ভূমিকা পালন করে।

বায়ুর গুণমানকে প্রভাবিত করে : ট্রপোস্ফিয়ার হল যেখানে মানুষের ক্রিয়াকলাপ বা প্রাকৃতিক উত্স দ্বারা বায়ুমণ্ডলে নির্গত দূষক বায়ুর গুণমানকে জমে এবং প্রভাবিত করতে পারে। এই স্তরের মধ্যে প্রক্রিয়াগুলি স্থানীয় এবং আঞ্চলিক বায়ুর গুণমানকে প্রভাবিত করে দূষণকারীকে ছড়িয়ে দিতে বা আটকাতে পারে।

বিমান চলাচল : ট্রপোস্ফিয়ার হল যেখানে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক বিমান চলাচল হয়। ট্রপোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য, যেমন তাপমাত্রা গ্রেডিয়েন্ট এবং বায়ু, ফ্লাইট পাথ এবং বিমানের কর্মক্ষমতা প্রভাবিত করে।

মানুষের বাসস্থান : ট্রপোস্ফিয়ার হল পৃথিবীর পৃষ্ঠের সবচেয়ে কাছের স্তর যেখানে মানুষ বাস করে এবং যেখানে বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ ভর ঘনীভূত হয়। বিভিন্ন মানবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য এবং ঝড়, হারিকেন এবং টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস এবং প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য ট্রপোস্ফিয়ারের গতিশীলতা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

2.ওজোনস্তর ধ্বংসের কারণগুলি কী কী?

Ans:- বায়ু মণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য হলে তা ওজন স্তর পর্যন্ত পৌঁছে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ও ওজন গ্যাসের বিক্রিয়া ঘটে, এরফলে ওজনের অণু ভেঙে কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে যুক্ত হয়ে বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড উৎপন্ন হয়। এভাবে ওজন স্তর ধ্বংস হয়।

3.ওজোনস্তর ধ্বংসের ফলাফল লেখো।

Ans:- ওজোনস্তর ধ্বংসের ফলাফল : বর্তমানে বায়ুমণ্ডলে CFC, হ্যালন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফেট কণা প্রভৃতির বৃদ্ধির জন্য ওজোনস্তর ক্রমেই ধ্বংস হচ্ছে। এর ক্ষতিকর ফলাফলগুলি হল

১। বিশ্ব উষ্ণায়ন: ওজোনস্তর ধ্বংসের জন্যই ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে এসে পড়ে এবং তাই পৃথিবীর উয়তা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ ওজোনস্তরের বিনাশ।

২। বিভিন্ন রােগের সৃষ্টি: অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের চামড়ায় ক্যানসার সৃষ্টি হচ্ছে, মানুষের প্রজননক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং মানুষের চোখের কর্নিয়ায় নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। 

৩। বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিনষ্ট: ওজোনস্তর ধ্বংসে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে, উদ্ভিদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে এবং অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণীদের মৃত্যু ঘটছে।

4.বায়ুর উষ্ণতার সঙ্গে চাপের সম্পর্ক লেখে।

Ans:- বায়ু যখন উষ্ণতা হয় তখন তার আয়তন বাড়ে বা প্রসারিত হয়। বায়ু যখন প্রসারিত হয় তখন তার চাপ কমে। সুতরাং, বায়ু উষ্ণ হলে তার চাপ কমে। যেমন—নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ু উষ্ণ বলে এখানে বায়ুর চাপও কম হয়।

বায়ুর উষ্ণতা কমলে বায়ু সংকুচিত হয়। বায়ু যতই সংকুচিত হয় তার ঘনত্ব তথা চাপ ততই বাড়ে। সুতরাং, বায়ুর উন্নতা কমলে বায়ুর চাপ বাড়ে। যেমন— দুই মেরু অঞ্চলে অত্যধিক ঠান্ডার জন্য বায়ুর চাপ বেশি হয়।

5.ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য লেখো।

Ans:- ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

1. অবস্থানঃ নিরক্ষরেখার উভয়পার্শ্বে 5° থেকে 30° অক্ষাংশের মধ্যে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।

2. উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠ: 26°-27° উষ্ণতা বিশিষ্ট সমুদ্রপৃষ্ঠে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।

3. শক্তির উৎস: জলীয় বাষ্পের লীনতাপ থেকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত শক্তি লাভ করে তাই সমুদ্রের ওপর সৃষ্টি হয়ে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।

4. গভীর নিম্নচাপ ও সমচাপ রেখার আকৃতি: কেন্দ্রে অতি গভীর নিম্নচাপ থাকে, যা কখনো 880 মিলিবার হয়ে যায়। সমপ্রেষ লেখাগুলি সম্পূর্ণ বৃত্তাকার ও খুব ঘন সন্নিবিষ্ট হয়।

5. প্রবল বায়ুপ্রবাহ: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রমুখী বায়ু প্রবল গতিতে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু ঘন্টায় গড়ে 100-150 কিমি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে 200-400 কিমি পর্যন্ত প্রবাহিত হয়।

6. বিস্তার: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের আয়তন ছোট হলেও ব্যাস সর্বাধিক প্রায় 700 কিমি পর্যন্ত হয়।

7. বায়ু প্রবাহের দিক: উত্তর গোলার্ধে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে অর্থাৎ বামবর্তে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাটার দিকে অর্থাৎ দক্ষিণাবর্তে প্রবাহিত হয়।

৪. গতিপথ: আয়ন বায়ু প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়।

9. শান্ত চক্ষু: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে গভীর নিম্নচাপযুক্ত ও মেঘমুক্ত শান্ত আবহাওয়া বিশিষ্ট শান্ত ঘূর্ণবাতের চক্ষু অবস্থান করে।

10. বৃষ্টিপাত: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে বৃষ্টি না হলেও কেন্দ্রের চারিদিকে প্রবল বেগে ঝড়ের সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎসহ একটানা বৃষ্টিপাত হয়।

11. সময়কাল ও স্থায়িত্ব: প্রধানত গ্রীষ্মকাল ও শরৎকালের ক্ষণস্থায়ী ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।

12. সীমান্তের অনুপস্থিতি: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতে সমচাপ রেখাগুলি বৃত্তাকার হওয়ায় কোন সীমান্ত সৃষ্টি হয় না।

13. ব্যারোট্রপিক আবহাওয়া: একই উষ্ণতা বিশিষ্ট বায়ুপুঞ্জের মিলনে গড়ে ওঠে বলে আবহমণ্ডলের এই ধরনের সমধর্মিতাকে ব্যারোট্রপিক আবহাওয়া বলে।

14. ধ্বংসক্ষমতা: বিধ্বংসী ক্ষমতা যুক্ত ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতে জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

6.ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

Ans:- ঘূর্ণবাত

ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে নিম্নচাপ।

ঘূর্ণবাতের বায়ু চারদিক থেকে কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে।

ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রের বায়ু উষ্ণ ও ঊর্ধ্বমুখী।

উত্তর গােলার্ধে বায়ু বামাবর্তে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার বিপরীতদিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে। বায়ু দক্ষিণাবর্তে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রবাহিত হয়।

মাঝারি থেকে তীব্র গতিসম্পন্ন।

ঘূর্ণবাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

আকাশ মেঘে পরিপূর্ণ থাকে।

অল্পক্ষণ স্থায়ী হয়। তবে খুব শক্তিশালী ও বিধ্বংসী।

প্রতীপ ঘূর্ণবাত

প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে উচ্চচাপ।

প্রতীপ ঘুর্ণবাতে বায়ু কেন্দ্র থেকে চারদিকে প্রবাহিত হয়।

প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বায়ু শীতল ও অধােমুখী।

প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ু উত্তর গােলার্ধে দক্ষিণাবর্তে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বায়ু বামাবর্তে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে প্রবাহিত হয়।

ধীর গতিসম্পন্ন।

প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বৃষ্টি হয় না। আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।

মেঘের কোনাে চিহ্ন থাকে না। আকাশ রােদে ঝলমল করে।

দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়। তবে ঘূর্ণবাতের মতাে শক্তিশালী ও বিধ্বংসী হয় না।

7.পরিচলন বৃষ্টিপাত কী?

Ans:- প্রবল সূর্যতাপে ভূ-পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হলে সেইস্থানে ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ ও আবায়ু ওপরের দিকে উঠে গিয়ে প্রসারিত ও শীতল হয়ে ঘনীভবনের মাধ্যমে সেখানে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে।

8.শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কীভাবে সংঘটিত হয়?

Ans:- শৈল বা পাহাড় দ্বারা উৎক্ষিপ্ত হয়ে বৃষ্টিপাত হয় বলে একে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (Orographic rain) বলে। সমুদ্র উপকূলের নিকটবর্তী অঞ্চলে পাহাড়, পর্বত, মালভূমি থাকলে নিকটবর্তী উষ্ণ সমুদ্র থেকে আগত জলীয়বাষ্পম্পূর্ণ বায়ু এই উচ্চ ভূমিতে ধাক্কা খায় এবং ওপরে উঠতে থাকলে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।

8. নিরপেক্ষ বা চরম বা বিশুদ্ধ আর্দ্রতা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা সাপেক্ষ আর্দ্রতা কাকে বলে?

Ans:- নিরপেক্ষ বা চরম বা বিশুদ্ধ আর্দ্রতা : একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের মােট পরিমাণকে বলা হয় নিরপেক্ষ বা চরম বা বিশুদ্ধ আর্দ্রতা।

একক : নিরপেক্ষ আদ্রর্তা গ্রাম/ঘনমিটার এককে প্রকাশ করা হয়। 

আপেক্ষিক আর্দ্রতা : কোনাে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে। উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এবং ওই একই উষ্ণতায় ওই একই আয়তনের বায়ুর সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতা—এই দুয়ের অনুপাতকেইবলা হয়আপেক্ষিক বা সাপেক্ষআর্দ্রতা। আপেক্ষিক আর্দ্রতা শতকরা (%) হিসাবে এবং কাছাকাছি পূর্ণমানে প্রকাশ করা হয়। সুতরাং 

একক: আপেক্ষিক আদ্রর্তা একটি আনুপাতিক প্রকাশ হওয়ায় এর কোনাে একক হয় না।

9.গ্রিনহাউস এফেক্ট বলতে কী বোঝো?

Ans:- গ্রিনহাউস প্রভাব হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সূর্য থেকে আসা বিকিরণ গ্রিনহাউস গ্যাস দ্বারা শোষিত হয় এবং মহাকাশে প্রতিফলিত হয় না। এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠকে নিরোধক করে এবং এটিকে হিমায়িত হতে বাধা দেয়।”

দশম শ্রেণির ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর / মাধ্যমিক ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

1.তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করো।

Ans:- উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস (Layers of Atmosphere based on variation in temperature) : বিভিন্ন স্তরে উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডল ৬টি স্তরে বিভক্ত । যেমন— (১) ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমন্ডল, (২) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমন্ডল, (৩) মেসোস্ফিয়ার, (৪) আয়োনোস্ফিয়ার, (৫) এক্সোস্ফিয়ার, এবং (৬) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার ।

(১) ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমন্ডল (Troposphere) : গ্রিক শব্দ ট্রপো (Tropo) কথার অর্থ হল পরিবর্তন (Change) এবং দৈনন্দিন আবহাওয়ায় আমরা যেরকম বিভিন্ন পরিবর্তন অনুভব করি, এই বায়ুস্তরেও সে ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় । বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তরে অবাধে তাপীয় মিশ্রণ ঘটে বলে, একে ট্রপোস্ফিয়ার বলে । বায়ুমণ্ডলের এই সর্বনিম্ন স্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ১৮ কিমি. এবং মেরু অঞ্চলে ৮ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বায়ুতে প্রায় ৯০% ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি থাকায় এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, তুষারপাত প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটতে দেখা যায়, এজন্য ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে ‘ক্ষুব্ধ মন্ডল’ বলে । বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে আমরা বাস করি ।

ট্রপোপজ (Tropopause) : ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে বলে ট্রপোপজ । এই স্তরে বায়ুর উষ্ণতা একই রকম থাকে বলে একে সমতাপ অঞ্চল বলে ।

বৈশিষ্ট্য :

(i) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় ততই তাপ মাত্রা কমতে থাকে । প্রতি কিলোমিটারে ৬.৪° বা প্রায় প্রতি ১৬৫ মিটার উচ্চতার জন্য ১° সেন্টিগ্রেড করে তাপ হ্রাস পায়, একে উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হার বা ‘Normal Laps rate’ বলে । ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে ১০ — ১৩ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর তাপ এই হারে কমতে থাকে । মধ্য অক্ষাংশে (Middle Latitude) ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব সীমায় বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ -৭৫° সেন্টিগ্রেড থেকে -৬০° সেন্টিগ্রেড হয় ।

(ii) বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ারই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর । বায়ুমণ্ডলের মোট গ্যাসীয় ভরের প্রায় ৮০% ধারণ করে ট্রপোস্ফিয়ার । এজন্য এখানে বায়ুরচাপ সবচেয়ে বেশি ।

(iii) ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে জলীয়বাষ্প বা মেঘ থাকে না বললেই চলে ।

(iv) এই অংশে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর চাপ কমতে থাকে । এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ।

(২) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমন্ডল (Stratosphere) : ট্রপোপজের ওপরে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় ৫০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বলে । এটি বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তর । জলীয় বাষ্পহীন এই স্তরে ঝড়-বৃষ্টি হয় না বলে একে শান্তমন্ডলও বলে ।

বৈশিষ্ট্য :

(i) স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরটি নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় মেরু অঞ্চলে অধিক পুরু হয়ে থাকে ।

(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ২০ – ৩৫ কিমি. উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের আধিক্য দেখা যায় বলে এই স্তরটিকে ওজোন স্তর বলে ।

(iii) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ।

(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ধূলিকণা, মেঘ প্রভৃতি না থাকায় এখানে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে না ।

(iii) স্ত্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত দেখা যায় না বলে দ্রুতগতিসম্পন্ন জেটবিমানগুলো ঝড়-বৃষ্টি এড়িয়ে চলার জন্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে চলাচল করে । জেটবিমানগুলি সাধারণত এই স্তরের মধ্যে দিয়ে চলার সময়ে আকাশে সাদা দাগ রেখে যায় ।

স্ট্র্যাটোপজ : স্ট্যাটোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে স্ট্র্যাটোপজ বলে । এই স্তরে উষ্ণতার স্থিতাবস্থা বজায় থাকে ।

(৩) মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere) : স্ট্র্যাটোপজের ওপর থেকে বায়ুমণ্ডলের যতদূর উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতা কমতে থাকে, সেই অংশটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে । মেসোস্ফিয়ার স্তরটি স্ট্র্যাটোপজের ওপরে স্ট্র্যাটেস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের মধ্যে ৮০ কিমি. পর্যন্ত বিস্তৃত । এটি বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর । মেসোস্ফিয়ার স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা ক্রমশ কমতে থাকে এবং ৮০ কিমি. উচ্চতায় অর্থাৎ এই স্তরের উর্ধ্বসীমায় উষ্ণতা কমে কম বেশি – ৯৩° সে. হয় । মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলি মেসোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।

মেসোপজ (Mesopause) : মেসোস্ফিয়ারের ওপরে যে উচ্চতায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া থেমে যায়, অর্থাৎ পজ করে, তাকে মেসোপজ বলে । এক কথায় মেসোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে বলে মেসোপজ । এটি এই স্তরে জলীয় বাষ্প জমাট বাঁধে । এর ওপর থেকেই আয়নোস্ফিয়ার স্তরটি শুরু হয় ।

(৪) আয়োনোস্ফিয়ার (Ionosphere) : মেসোস্ফিয়ার স্তরের শেষ সীমা হল মেসোপজ । আর এই মেসোপজের ওপরে প্রায় ৫০০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলের স্তরকে আয়নোস্ফিয়ার বলে । এই স্তরে গ্যাসীয় কণাগুলি তড়িৎ-আধানযুক্ত বা আয়নিত অবস্থায় থাকে বলে, এই স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলা হয় । এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে । এই স্তরের নীচের অংশে উষ্ণতা অত্যন্ত দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায় বলে স্তরটি থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere) নামেও পরিচিত । মেসোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমায় অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কম বেশি – ৯৩° সেলসিয়াস থেকে বাড়তে বাড়তে ৪৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রায় ১২৩২° সেলসিয়াসে পরিণত হয় ।

বৈশিষ্ট্য :

(i) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা অত্যন্ত দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায় ।

(ii) অতি বেগুনি রশ্মি ও মহাজাগতিক রশ্মির সংঘাতে আয়নোস্ফিয়ারে প্রভূত পরিমাণে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নের সৃষ্টি হয় ।

(iii) এই স্তরে তড়িদাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপণের ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে এক রকম উজ্জ্বল আলোক বিচ্ছুরণ দেখা যায়, একে মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বলে । এই মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা সুমেরুতে সুমেরুপ্রভা এবং কুমেরুতে কুমেরুপ্রভা নামে পরিচিত ।

(iv) প্রখর সূর্য কিরণের জন্য হালকা বায়ু দিয়ে গঠিত এই স্তরের ভর বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র ০.৫% ।

(v) ভূপৃষ্ঠের বেতার তরঙ্গগুলি আয়নোস্ফিয়ার স্তর ভেদ করে আরও ওপরে যেতে পারে না বলে এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে । তাই বিভিন্ন রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত গান, বাজনা, নাটক, কবিতা, সংবাদ প্রভৃতি আমরা রেডিও মারফত বাড়ি বসে শুনতে পাই ।

(৫) এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere) : এক্সোস্ফিয়ার হল বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে দূরবর্তী স্তর । এই স্তরটি আয়নোস্ফিয়ারের ওপরে প্রায় ৭০০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ।

বৈশিষ্ট্য : (i) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ।

(ii) এই স্তরটি প্রধানত হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং কিছু ভারী অণু যেমন নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইড দ্বারা গঠিত ।

(iii) এই স্তরের বায়ু এত হালকা যে এর অস্তিত্ব প্রায় বোঝাই যায় না ।

(iv) এক্সোস্ফিয়ার স্তর থেকে বায়বীয় কণাগুলি ক্রমাগত মহাশূন্যে নির্গত হয় ।

(v) এই স্তরের উষ্ণতা প্রায় ১২০০° সে. থেকে ১৬০০° সে. । 

(৬) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere) : এক্সোস্ফিয়ার স্তরের ওপরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বেষ্টনকারী চৌম্বকক্ষেত্রটি হল ম্যাগনেটোস্ফিয়ার স্তর । এটি বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ স্তর । এক্সোস্ফিয়ার স্তরের ওপর ১,৫০০ কিমি. থেকে ১০,০০০ কিমি বা তারও বেশি পর্যন্ত ম্যাগনেটোস্ফিয়ার স্তর বিস্তৃত । এই স্তরটি ইলেকট্রন ও প্রোটন দ্বারা গঠিত । এই স্তরের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নিত কণার উপস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয় । সৌর বাত্যা (solar wind) থেকে নির্গত ইলেকট্রন ও প্রোটনের প্রভাবে এই স্তরে একটি স্থায়ী চুম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে । তাই এই স্তরের নাম হয়েছে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার । এটি হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমা । স্তরটি ধীরে ধীরে বায়ুশূন্য হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায় ।

2.রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করো।

Ans:- ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বে যে অদৃশ্য গ্যাসের আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে, তাকে বায়ুমণ্ডল (Atmosphere) বলে । বায়ুমণ্ডল বলতে পৃথিবীকে চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে বোঝায়, যা পৃথিবী তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে । একে আবহমণ্ডলও বলা হয় । বায়ুমণ্ডলকে চোখে দেখা যায় না, শুধু এর অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে পারি । পৃথিবীএটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণের বলে পৃথিবীর গায়ে লেগে থাকে এবং পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে আবর্তন করতে থাকে । বায়ুমণ্ডল কতকগুলি বিভিন্ন গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উর্দ্ধে এটি ক্রমশঃ হালকা হয়ে গেছে । বায়ুমণ্ডলের শতকরা ৯৭ ভাগ পদার্থই ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৯ কিলােমিটারের ( ১৮ মাইল ) মধ্যে অবস্থান করলেও বায়ুমণ্ডলের উর্ধ্বসীমা আরও সুদূর প্রসারিত । বৈজ্ঞানিকগণ বায়ুমণ্ডলের এই সীমানাকে ১০,০০০ কিলােমিটার বা ৬,০০০ মাইল পর্যন্ত ধরে থাকেন , যার আরও পরে আছে মহাশূন্য । আবহবিদ্যায় নীচের ১০০ কিঃ মিঃ বা ৬০ মাইল পর্যন্ত বায়ুস্তর সম্বন্ধে পর্যালােচনা করা হয় । বাকী উপরের অংশ এরোনমি ( Aeronomy ) বিদ্যার অন্তভুক্ত । উপাদান ও রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস মূলত ২ টি স্তরে বিভক্ত । যথা – সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) ও বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere) । নিচে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল

সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere):

বুৎপত্তিগত অর্থঃ

গ্রীক শব্দ “Homo” এর অর্থ ‘সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।

সংজ্ঞাঃ  ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অংশে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের রাসায়নিক গঠন বিশেষত বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে । এই জন্য বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) বলা হয় ।

বিস্তারঃ সমমন্ডল ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে মোটামুটি ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অবস্থিত ।

গঠনঃ সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) প্রধানত – বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ [যথা -নাইট্রোজেন (৭৮%), অক্সিজেন (২০.৯%) এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্গন, নিওন, হিলিয়াম, ক্রিপটন, জেনন, হাইড্রোজেন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন প্রভৃতি গ্যাসের মিশ্রণ (১.১ %)], জলীয় বাষ্প এবং জৈব ও অজৈব কণিকা বা অ্যারোসল (Aerosol) যেমন – অতি ক্ষুদ্র খনিজ, লবণ, সমুদ্রতীরের বালুকণা, কয়লার গুঁড়ো বা ধোঁয়া প্রভৃতি দিয়ে গঠিত ।

স্তরসমূহঃ

সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) মূলত তিনটি উপস্তরে বিভক্ত । যথা

ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere): ভু-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের প্রথম স্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere) বলে ।

স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere): ট্রপোস্ফিয়ারের উপরে ১৮ কিমি থেকে ৫০ কিমি পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের দ্বিতীয় স্তরকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere) বলে ।

মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere): স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরে ৫০ কিমি থেকে ৮০ কিমি পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের তৃতীয় স্তরকে মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere) বলে ।

বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere):

বুৎপত্তিগত অর্থঃ গ্রীক শব্দ “Hetoro” এর অর্থ ‘বিষমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ’ ও “Sphere” এর অর্থ ‘মন্ডল’ ।

সংজ্ঞাঃবায়ুমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার স্তরের ওপরের অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো একই রকম থাকে না বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবস্থিত বায়ুস্তরকে বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere) বলা হয় ।

বিস্তারঃ বিষমমন্ডলের বিস্তার মেসোস্ফিয়ারের উপরে মোটামুটি ৮০ কিমি থেকে প্রায় ১০০০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত ।গঠনঃ

বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere) প্রধানত বিভিন্ন গ্যাসের (যথা – নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হিলিয়াম, হাইড্রোজেন প্রভৃতি) আণবিক মিশ্রণে গঠিত ।

স্তরসমূহঃ

বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere) মূলত চারটি উপস্তরে বিভক্ত । যথা-

আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (Molecular Nitrogen Level): মোটামুটি ৯০ কিমি থেকে প্রায় ২০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত হেটোরোস্ফিয়ারের প্রথম স্তরকে আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (Molecular Nitrogen Level) বলে ।

পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (Atomic oxygen level): আণবিক নাইট্রোজেন স্তরের উপরে প্রায় ১১০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত হেটোরোস্ফিয়ারের দ্বিতীয় স্তরকে পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (Atomic oxygen level) বলে ।

হিলিয়াম স্তর (Helium level): পারমাণবিক অক্সিজেন স্তরের উপরে প্রায় ৩৫০০ কিমি পর্যন্ত হেটোরোস্ফিয়ারের তৃতীয় স্তরকে হিলিয়াম স্তর (Helium level) বলে।

হাইড্রোজেন স্তর (Hydrogen Level): হিলিয়াম স্তরের উপরে বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ উর্দ্ধসীমা ১০০০০ কিমি পর্যন্ত অবস্থিত স্তরটিকে হাইড্রোজেন স্তর (Hydrogen Level) বলে ।

3.বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

Ans:- অক্ষাংশঃ

অক্ষাংশ অনুসারে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্যরশ্মির পতন কোণে তারতম্য ঘটে। ফলে উষ্ণতার পার্থক্যও হয়। লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ বেশি এবং তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয়। নিরক্ষরেখা থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ তির্যকভাবে পড়ে, ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে তাপমাত্রা কম হয়।

◆ দিন রাত্রির দৈর্ঘ‍্যঃ

দিন রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থানের মধ্যে উষ্ণতার তারতম‍্য পরিলক্ষিত হয়। দিন বড় এবং রাত্রি ছোট হলে দিনের সময় শোষিত তাপের সবটাই রাত্রে বিকিরিত হতে পারে না, ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। আবার দিন ছোট ও রাত্রি বড় হলে দিনের সময় বায়ুমণ্ডল যে পরিমাণ তাপ শোষণ করে রাত্রে তার চেয়ে বেশি তাপ বিকিরিত হয়, ফলে বায়ুমণ্ডল শীতল হয়ে পড়ে।

◆ ভূমির উচ্চতাঃ

সমুদ্রতল থেকে যতই ওপরে ঠা যায় বায়ুর উষ্ণতা ততই হ্রাস পেতে থাকে। অর্থাৎ, ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পায়। এই কারণে যে স্থানটি সমুদ্র সমতল থেকে যত উঁচুতে অবস্থিত তার উষ্ণতা তত কম হয় এবং সমুদ্র সমতল থেকে কম উচ্চতায় অবস্থিত স্থানের উষ্ণতা বেশি হয়।

◆ সমুদ্র থেকে দূরত্বঃ

জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ বা দ্রুত শীতল হয়। গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ যতটা উষ্ণ হয়, জলভাগ ততটা উষ্ণ হয় না। আবার শীতকালে স্থলভাগ যতটা শীতল হয়, জলভাগ ততটা শীতল হয় না। এই কারণে সমুদ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে গ্রীষ্মকাল অধিক উষ্ণ এবং শীতকাল অধিক শীতল হয়।

◆ বায়ুপ্রবাহঃ

যে অঞ্চলের মধ‍্য দিয়ে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চল উষ্ণ এবং যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চল শীতল প্রকৃতির হয়। বায়ুপ্রবাহের উপর কোনো অঞ্চলের বায়ুর উষ্ণতা অনেকাংশে নির্ভর করে।

◆ সমুদ্রস্রোতঃ

সমুদ্রস্রোত বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। সমুদ্রের যে উপকূল অঞ্চল বরাবর উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় সে অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল উষ্ণ এবং যে অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল শীতল প্রকৃতির হয়।

◆ পর্বতের অবস্থানঃ

উষ্ণ বায়ু এবং শীতল বায়ুর গতিপথে আড়াআড়িভাবে কোনো পর্বতশ্রেণী অবস্থান করলে বায়ুপ্রবাহ ওই পর্বতশ্রেণীতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে পর্বতের উভয়দিকে উষ্ণতার তারতম‍্য পরিলক্ষিত হয়।

◆ মেঘাচ্ছন্নতাঃ

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বা ঘন মেঘের আবরণ দিনের বেলা সূর্যরশ্মিকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে বাধা দেয়, আবার রাত্রের সময় ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দেয়। ফলে বিকিরিত তাপ মেঘ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই কারণে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দিনের বেলা উত্তাপ কমে আর রাত্রিবেলা উত্তাপ বৃদ্ধি পায়। এইভাবে মেঘাচ্ছন্নতা বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যে প্রভাব বিস্তার করে।

4.পৃথিবীর প্রধান প্রধান তাপবলয়গুলির পরিচয় দাও।

Ans:- পৃথিবীর তাপবলয় তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠকে মােট পাঁচটি তাপবলয় বা তাপমণ্ডলে ভাগ করা যায়। এগুলি হল—

1. উষ্ণমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল

অবস্থান: নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে 23 1⁄2° অক্ষরেখা পর্যন্ত। বিস্তৃত স্থানে অর্থাৎ কর্কটক্রান্তিরেখা ও মকরক্রান্তিরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলকে উষ্ণমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল বলে। 27°সে বা 80°ফা সমােয়রেখাকে অনেকসময় উয়মণ্ডলের সীমারেখা ধরা হয়। সেক্ষেত্রে নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে 30° অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহ  উষ্ণমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়। 

কারণ: [i] সূর্যরশ্মির পতন: এখানকার প্রতিটি স্থানে বছরে অন্তত দু-দিন মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে এবং বছরের অন্যান্য দিনও সূর্যরশ্মি এখানে বেশি তির্যকভাবে পড়ে না। [ii] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হাসবৃদ্ধি: সারাবছর এখানে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি খুব কম। হয়। তাই সারাবছর এখানকার বায়ুর তাপমাত্রা অন্যান্য অঞলের তুলনায় বেশি। এজন্য এই অঞ্চলটির নাম উয়ুমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল।বৈশিষ্ট্য: [i] পর্যাপ্ত সূর্যরশ্মি:  উষ্ণমণ্ডলে সারাবছর যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যরশ্মি পাওয়া যায়। [ii] গড় তাপমাত্রা: এখানকার গড় তাপমাত্রা সারাবছর বেশি (প্রায় 27°সে) থাকে। এ ছাড়া, শীত ও গ্রীষ্মের  উষ্ণতার পার্থক্যও কম হয়। [iii] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের পার্থক্য: এখানে সারাবছর দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যে খুব বেশি তারতম্য হয় না। [iv] ঋতুপরিবর্তন: এই অঞলের মধ্যভাগে ঋতুপরিবর্তন হয় না বললেই চলে। 

অবস্থান: কর্কটক্রান্তিরেখা এবং মকরক্রান্তিরেখা থেকে যথাক্রমে। সুমেরুবৃত্ত এবং কুমেরুবৃত্ত পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম নাতিশীতোষ্ণমন্ডল । এর মধ্যে কর্কটক্রান্তিরেখা (23 1⁄2° উ.) থেকে সুমেরুবৃত্ত (66 1⁄2° উ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম উত্তর নাতিশীতোষ্ণমন্ডল এবং মকরক্রান্তিরেখা (23 1⁄2° দ.) থেকে কুমেরুবৃত্ত (66 1⁄2° দ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণমন্ডল। সমোষ্ণরেখার হিসাবে 27° সে থেকে 0°সে সমোষ্ণরেখার মাঝখানের স্থানসমূহ নাতিশীতোষ্ণমন্ডল অন্তর্গত। কারণ: [i] সূর্যরশ্মির পতন: সূর্যরশ্মি এখানে খুব বেশি তির্যকভাবে পড়ে না। উষ্ণমণ্ডলের তুলনায় সূর্যরশ্মি কম পাওয়া গেলেও হিমমণ্ডলের তুলনায় বেশি পাওয়া যায়। [ii] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি: দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি মাঝামাঝি ধরনের হয়। এজন্য এই অঞলে উষ্ণতাও খুব বেশি বা কম হয় না, মধ্যম প্রকৃতির হয়। ফলে এখানে বছরের অধিকাংশ সময় নাতিশীতােষ্ম অবস্থা বিরাজ করে।

বৈশিষ্ট্য: [i] গড় উন্নতা: সারাবছর এখানকার গড় উষ্ণতা 0° সে। থেকে 27° সে-এর মধ্যে থাকে। [ii] ঋতুর তীব্রতা: এখানে গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল কোনােটিই তীব্র নয়। উপবিভাগ: উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে এই  নাতিশীতোষ্ণমন্ডলকে দুটি বিভাগে ভাগ করা যায়—[i] উম্ন নাতিশীতোষ্ণমন্ডল:  নাতিশীতোষ্ণমন্ডলের যে অংশটি উষ্ণমণ্ডলসংলগ্ন অর্থাৎ কর্কটক্রান্তিরেখা ও মকরক্রান্তিরেখার দিকে থাকে (30° থেকে 45° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহ) সেখানে উষ্ণতা অপেক্ষাকৃত বেশি বলে ওই অংশটিকে উয়।  নাতিশীতোষ্ণমন্ডল বলে। [ii] শীতল নাতিশীতোষ্ণমন্ডল: নাতিশীতোষ্ণমন্ডলের যে অংশটি হিমমণ্ডলসংলগ্ন (45–661⁄2° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহ), অর্থাৎ মেরুবৃত্তের দিকে থাকে, সেখানে উয়তা অপেক্ষাকৃত কম বলে ওই অংশটিকে শীতল নাতিশীতোষ্ণমন্ডল বলে। 

4. – 5. উত্তর হিমমণ্ডল এবং দক্ষিণ হিমমণ্ডল

অবস্থান: উভয় গােলার্ধে দুই মেরুবৃত্ত থেকে মেরুবিন্দু পর্যন্ত অঞ্চলকে বলে হিমমণ্ডল। এর মধ্যে সুমেরুবৃত্ত (661⁄2° উ.) থেকে সমেরবিন্দু (90° উ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের নাম উত্তর হিমমণ্ডল এবং কুমেরুবৃত্ত (661⁄2° দ.) থেকে কুমেরুবিন্দু (90° দ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞলের নাম দক্ষিণ হিমমণ্ডল।

কারণ: উভয় মেরুর চারদিকে সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ে এবং বছরের বেশ কিছুটা সময় সূর্যরশ্মি একেবারেই পাওয়া যায় না। এজন্য এই অঞ্চলের উন্নতা খুবই কম এবং বছরের অধিকাংশ সময়। ভুমি হিমময় বা বরফাবৃত থাকে। তাই এই অঞ্চলের নাম হিমমণ্ডল। হিমমণ্ডলের সীমারেখা 0°সে সমােয়রেখা থেকে দুই মেরুবিন্দু পর্যন্ত।

বৈশিষ্ট্য: [i] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের তারতম্য: হিমমণ্ডলে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের তারতম্য অত্যন্ত বেশি। দুই মেরুবিন্দুতে একটানা ছয় মাস। দিন ও ছয় মাস রাত হয়। [ii] বায়ুমণ্ডলের উত্তপ্ততা: সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ায় একটানা ছয় মাস দিন থাকার সময়ও। বায়ুমণ্ডল বিশেষ একটা উত্তপ্ত হয় না। [iii] বার্ষিক গড় তাপমাত্রা: এখানকার বেশিরভাগ জায়গায় বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 0° সে-এর কম থাকে এবং বছরের অধিকাংশ সময় তুষারপাত হয়। [iv] মেরুজ্যোতির প্রভাব: একটানা রাত্রিকালীন সময়ে অরােরা (aurora) বা মেরুজ্যোতির প্রভাবে এই অঞ্চল মৃদু আলােকিত হয়।

5.বায়ুচাপের তারতম্যের কারণগুলি কী কী?

Ans:- বায়ুমণ্ডলে বায়ুর চাপের তারতম্যের কারণসমুহ

বায়ুমণ্ডলে বায়ুর চাপের তারতম্য যে কারণগুলির জন্য ঘটে, সেগুলি হল—1. উষ্ণতার প্রভাব : i. উন্নতা বৃদ্ধি ও বায়ুর চাপ: বায়ু উষ্ণ হলে প্রসারিত হয়। ফলে তার ঘনত্ব কমে যায় অর্থাৎ চাপ হাস পায়। এই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম হয়। ii. উষ্ণতা হ্রাস ও বায়ুর চাপ:উষ্ণতা কমলে বায়ু সংকুচিত হয়, ফলে তার ঘনত্ব বাস সুতরাং, চাপও বৃদ্ধি পায়। উভয় মেরু অঞ্চলে অতিরিক্ত ঠান্ডার বায়ুর চাপ বেশি হয়। 

2. বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ : জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায় বায়ুর তুলনায় হালকা হয় বলে এর চাপও কম হয়। এজন্য যে অঞলের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে সেখানে বাহন চাপ কম হয়।

3. উচ্চতার প্রভাব: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে উঠলে বায়ুস্তরের গভীরতা বা বায়ুমণ্ডলীয় ভর ক্রমশ কমে যায় এবং এর ফলে বায়ুর চাপও হ্রাস পায়। এজন্য দুটি ভিন্ন উচ্চতায় অবস্থিত স্থানের মধ্যে যেটির উচ্চতা বেশি সেখানে বায়ুর চাপও অপেক্ষাকৃত কম হয়। যেমন—অসমের শিবসাগর ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও বেশি উচ্চতার জন্য দার্জিলিঙে বায়ুর চাপ শিবসাগরের তুলনায় অনেক কম থাকে।

4. পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাব : পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যও বায়ুচাপের তারতম্য হয়। যেমন—পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ দুই মেরুর তুলনায় মেরুবৃত্তপ্রদেশে বেশি বলে মেরুবৃত্তপ্রদেশের বায়ু বেশি পরিমাণে বিক্ষিপ্ত হয়। এর ফলে বায়ুর ঘনত্ব কমে গিয়ে। মেরুবৃত্তপ্রদেশে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে।

5. থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : স্থলভাগ ও জলভাগের বিপরীতধর্মী চরিত্রের প্রভাবেও বায়ুর চাপের তারতম্য হয়। দিনের বেলা জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়। এর ফলে ভূপৃষ্ঠের বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। আবার রাতেরবেলায় স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে। শীতল হয়ে পড়ে এবং উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। এইভাবে স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টনের জন্য চাপের তারতম্য ঘটে।

6.পৃথিবীর প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির অবস্থান ও উৎপত্তির কারণ বর্ণনা করো।

Ans:- পৃথিবীর চাপ বলয় সমূহ (Pressure Belts of the world) : পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কারণে তার চারপাশের তুলনায় বায়ুর চাপ কোথাও কম হয় আবার কোথাও বেশি হয় । যদি কোথাও বায়ুর চাপ কম হয়, তাকে নিম্নচাপ বলে এবং কোথাও বায়ুর চাপ বেশি হলে তাকে উচ্চচাপ বলে । এই উচ্চচাপ ও নিম্নচাপগুলি পৃথিবীপৃষ্ঠকে ঘিরে এক একটি বলয়ের আকারে অবস্থান করে । এদের বায়ুচাপ বলয় বলে । বায়ুচাপ বলয়গুলি স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে উষ্ণতাগত তারতম্যে ছোটো ছোটো বায়ুচাপ কক্ষরূপে অবস্থান করে । পৃথিবীপৃষ্ঠে মোট সাতটি স্থায়ী বায়ু চাপবলয়ের সৃষ্টি হয়েছে । এই সাতটি চাপ বলয়ের মধ্যে তিনটি নিম্নচাপ বলয় ও চারটি উচ্চ চাপ বলয় অবস্থান করে । বায়ুচাপ বলয়গুলি হল, — (১) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়, (২) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়, (৩) মকরীয় উচ্চচাপ বলয়, (৪) সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় (৫) কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, (৬) সুমেরু উচ্চচাপ বলয় ও (৭) কুমেরু উচ্চচাপ বলয় ।

(১) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় (The Equatorial low pressure belt) : নিরক্ষরেখার উভয় দিকে ৫° – ১০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে একটি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় গড়ে উঠেছে, একে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় বলে ।

সৃষ্টির কারণ : (i) এই অঞ্চলে সারা বছর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে এখানকার বায়ু সারাবছর উষ্ণ ও হালকা হয় । (ii) এই অঞ্চলে জলভাগের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে বায়ু হালকা হয় ও বায়ু চাপ কম হয় । (iii) পৃথিবীর আবর্তন গতি নিরক্ষীয় অঞ্চলে সব চেয়ে বেশি বলে এর প্রভাবে এই অঞ্চলের উষ্ণ ও হালকা বায়ু ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে বিক্ষিপ্ত হয় । ফলে বায়ুর ঘনত্ব কমে ও বায়ুর চাপ কম হয় ।

(২) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় ও (৩) মকরীয় উচ্চচাপ বলয় (The Sub-Tropical high pressure belts) : পৃথিবীর দুই গোলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলে ২৫° – ৩৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে স্থায়ী কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় অবস্থিত । উত্তর গোলার্ধে কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরীয় উচ্চচাপ বলয় নামে পরিচিত ।

সৃষ্টির কারণ : (i) কোরিওলিস শক্তির প্রভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়ে ওপরে উঠে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় উচ্চতার প্রভাবে বায়ু ধীরে ধীরে শীতল ও সংকুচিত হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে নীচের দিকে নেমে আসে বলে বায়ুর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় । (ii) পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলের ঠান্ডা ও ভারী বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় বায়ুর কিছু অংশ ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে বলে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয় ।

কর্কটীয় ও মকরীয় শান্তবলয় : কর্কটক্রান্তীয় ও মকরক্রান্তীয় অঞ্চলে বায়ুর প্রধানত নিম্নমুখী গতি পরিলক্ষিত হয় বলে এই অঞ্চলে শান্তভাব বিরাজ করে । উত্তর গোলার্ধে এই অঞ্চলটি কর্কটীয় শান্তবলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরীয় শান্তবলয় নামে পরিচিত ।

(৪) সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় ও (৫) কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় (The Sub-Polar low pressure belts) : পৃথিবীর উভয় গোলার্ধের দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলে ৫৫° – ৬৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় অবস্থান করে । এই অঞ্চলকে উত্তর গোলার্ধে সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় বলে ।

সৃষ্টির কারণ : (i) দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশে পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ দুই মেরু অপেক্ষা অনেক বেশি বলে এই অঞ্চলের বায়ু ক্রান্তীয় ও মেরু অঞ্চলের দিকে ছিটকে যায় বলে বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পায় । (ii) দুই মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল ও ভারী বায়ু মেরুবৃত্ত অঞ্চলে পৌঁছুলে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বায়ু আয়তনে বেড়ে যায় ও বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ কমে যায় । ফলে দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশে নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে ।

(৬) সুমেরু উচ্চচাপ বলয় ও (৭) কুমেরু উচ্চচাপ বলয় (The Polar high pressure belts) : পৃথিবীর সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে সারা বছর স্থায়ীভাবে উচ্চচাপ বিরাজ করে । উত্তর গোলার্ধে এই অঞ্চলকে সুমেরু উচ্চচাপ বলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে কুমেরু উচ্চচাপ বলয় বলে ।

সৃষ্টির কারণ : (i) এই দুই অঞ্চলে সারা বছর সূর্যকিরণের অভাবে বায়ু সর্বদা শীতল ও ভারী হয় । (ii) বাষ্পীভাবন খুব কম হওয়ার জন্য এই অঞ্চলের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম থাকে বলে বায়ু অপেক্ষাকৃত ভারী হয় । (iii) পার্শ্ববর্তী মেরুবৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয় থেকে ঊর্ধ্বগামী বায়ুর কিছু অংশ শীতল হয়ে এই অঞ্চলে নেমে আসে বলে বাযুর ঘনত্ব ও চাপ বৃদ্ধি পায় । এই সব কারণে দুই মেরু অঞ্চলে উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে ।

7.বায়ুচাপ বলয়ের সঙ্গে নিয়ত বায়ুর সম্পর্ক লেখো।

Ans বায়ুচাপের পার্থক্যই নিয়ত বায়ুপ্রাহের প্রধান কারণ । যেখানে বায়ুর চাপ বেশি, সেখান থেকে যে দিকে বায়ুর চাপ কম, সেদিকেই বায়ু প্রবাহিত হয় । এই নিয়ম মেনে পৃথিবীর চারটি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় থেকে তিনটি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে নিয়মিতভাবে ও নির্দিষ্ট গতিতে প্রবাহিত বায়ুই হল নিয়ত বায়ুপ্রবাহ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ তিন রকমের, যথা— আয়ন বায়ু, পশ্চিমাবায়ু ও মেরুবায়ু ।

(১) আয়ন বায়ুর সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়ের সম্পর্ক :

(ক) উত্তর গোলার্ধে কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে ।

(খ) মোটামুটিভাবে ৩০০ থেকে ৫০ উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে আয়নবায়ু প্রবাহিত হয় । ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে এই বায়ুপ্রবাহ ডান দিকে কিছুটা বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ছুটে আসে ।

(গ) উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসে বলে উত্তর গোলার্ধে এই বায়ুপ্রবাহের নাম উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু ।

(ঘ) দক্ষিন গোলার্ধে আয়নবায়ু ফেরেলের সূত্র অনুসারে খানিকটা বাঁ দিকে বেঁকে দক্ষিন-পূর্ব দিক থেকে ছুটে আসে । দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আসে বলে দক্ষিণ গোলার্ধে এই বায়ুপ্রবাহের নাম দক্ষিন-পূর্ব আয়ণ বায়ু ।

(ঙ) নিরক্ষরেখা নিকটবর্তী নিরক্ষীয় ক্রান্তীবলয় অঞ্চলে ৫০ উত্তর অক্ষাংহ থেকে ৫০ দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত স্থানে  উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব আয়ণ বায়ু মিলিত হয় বলে ওই অঞ্চলে কোনো বায়ুপ্রবাহ থাকে না ।

(২) পশ্চিমাবায়ুর সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়ের সম্পর্ক : পশ্চিমাবায়ু উভয় গোলার্ধে সাধারণত ৩০০ থেকে ৬০০ অক্ষরেখার মধ্যে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে প্রবাহিত হয় । এই বায়ু ফেরেলের সূত্র মেনে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু হিসেবে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁ দিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু হিসাবে প্রবাহিত হয় ।

(৩) মেরুবায়ুর সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়ের সম্পর্ক : মেরুবায়ু সাধারণত উভয় গোলার্ধে মোটা মুটি ৭০০ থেকে ৮০০ অক্ষরেখার মধ্যে মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে প্রবাহিত হয় । এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব মেরুবায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব মেরুবায়ু নামে প্রবাহিত হয় ।

8.বিভিন্ন প্রকার সাময়িক বায়ুপ্রবাহের পরিচয় দাও।

Ans:- 1. সমুদ্রবায়ু: জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ ও শীতল হয় বলে দিনেরবেলা সমুদ্র অপেক্ষা সংলগ্ন স্থলভাগ বেশি উষ্ণ হয়।এজন্য স্থলভাগের বায়ু দ্রুত হালকা ও প্রসারিত হয়ে ঊর্ধ্বগামী হয়। এর ফলে স্থলভাগের ওপর বায়ুচাপ হ্রাস পায় এবং সমুদ্রের ওপর বায়ুচাপ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ স্থলভাগের ওপর সৃষ্টি হয়। নিম্নচাপ এবং সমুদ্রের ওপর উচ্চচাপ এর ফলে সমুদ্রের ওপর। থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল যে বায়ু স্থলভাগের ওই নিম্নচাপ পূরণ করার জন্য স্থলভাগের দিকে ছুটে আসে, তাকে বলা হয় সমুদ্রবায়ু।

বৈশিষ্ট্য: সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞলে দিনেরবেলায় এই ধরনের বায়ু প্রবাহিত হয়।

2. স্থলবায়ু: রাতে স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হলেও জলভাগ তখনও উয় থাকে। তাই স্থলভাগের ওপর তখন উচ্চচাপ এবং সমুদ্রের ওপর নিম্নচাপ বিরাজ করে। ওই নিম্নচাপ পূরণ করার জন্য স্থলভাগ থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল যে বায়ু সমুদ্রের দিকে ছুটে যায়, তাকে বলা হয় স্থলবায়ু।

বৈশিষ্ট্য: এই বায়ু সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে মাঝরাতের পর বিশেষ করে শেষরাতের দিকে বা ভােরবেলা প্রবলভাবে প্রবাহিত হয়। 

3. মৌসুমি বা ঋতুভিত্তিক বায়ু: গ্রীষ্ম ও শীত ঋতুতে জলভাগ ও স্থলভাগের মধ্যে বায়ুর উন্নতা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের জন্য যথাক্রমে জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে এবং স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় সেই বায়ুকে বলা হয়। ঋতুভিত্তিক বায়ু। মৌসুমি বায়ু হল এই ধরনের সাময়িক বায়ু বা ঋতুভিত্তিক বায়ু। প্রকৃতপক্ষে এই বায়ু সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর। বৃহৎ সংস্করণ।

বৈশিষ্ট্য: ভারতে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা । গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু। বা শীতকালীন মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।

4. পার্বত্য ও উপত্যকা বায়ু: পার্বত্য অঞ্চলে রাতের বেলা পার্বত্য বায়ু এবং দিনের বেলা উপত্যকা বায়ু প্রবাহিত হয়। পার্বত্য বায়ু : শান্ত মেঘমুক্ত রাত্রিতে পর্বতের ওপর অংশের বায়ু দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল ও ভারী হয় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পর্বতের ঢাল বরাবর নীচে নেমে উপত্যকার মধ্যভাগে সঞ্জিত হয়। একে বলে পার্বত্য বায়ু। ঢাল বরাবর নিম্নগামী এই পার্বত্য বায়ুকে ক্যাটাবেটিক বায়ু (Katabatic Wind, গ্রিক শব্দ Kata = down বা নীচের দিকে)-ও বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য: [i] গতিবেগ: সাধারণত রাতের বেলা এই বায়ু প্রবাহিত হলেও ভােরবেলা এর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি হয়। [ii] বৈপরীত্য উত্তাপ: এই নিম্নগামী শীতল বায়ুর প্রভাবে উপত্যকার উপরিভাগের তুলনায় নিম্ন অংশে শীতের তীব্রতা বাড়ে, ফলে সেখানে বৈপরীত্য উত্তাপ সৃষ্টি হয়।

উপত্যকা বায়ু : দিনের বেলা সূর্যতাপে উত্তপ্ত উপত্যকার দু-দিকের ঢালের ওপরের বায়ু যে পরিমাণ উত্তপ্ত হয়, উপত্যকার মধ্যভাগের বায়ু ততটা উত্তপ্ত হয় না। এই বায়ু শীতল থাকে এবং তার ফলে উচ্চচাপের সৃষ্টি করে ও ভারী হয়ে নীচের দিকে নামে। এই নিম্নগামী বায়ুর চাপে তখন উপত্যকার দুদিকের ঢালের বায়ু ওপরের দিকে প্রবাহিত হয়। এই ঊর্ধ্বটাল প্রবাহী বায়ুকে বলে উপত্যকা বায়ু। এর আর এক নাম অ্যানাবেটিক বায়ু (Anabatic Wind, গ্রিক শব্দ Ana = up বা ওপরের দিকে)।।

বৈশিষ্ট্য: [i] বিপরীতমুখী: উপত্যকা বায়ু হল পার্বত্য বায়ুর ঠিক বিপরীত। [ii] উচ্চ অংশে জনবসতি: ইউরােপের অনেক জায়গায় উপত্যকা বায়ুর প্রভাবে লােকবসতি ও কৃষিকাজ উপত্যকার নীচের। দিকে না হয়ে পর্বতের ওপরের ঢালে গড়ে ওঠে।

8.উদাহরণসহ বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Ans:- বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্যগত তারতম্যের ভিত্তিতে বৃষ্টিপাতকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা—1. পরিচলন বৃষ্টিপাত :

ধারণা: ভূপৃষ্ঠ উয় হলে পরিচলন পদ্ধতিতে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু প্রবলবেগে ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই বৃষ্টিপাত পরিচলন বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। 

পদ্ধতি: ভূপৃষ্ঠের যে সমস্ত স্থানে জলভাগ বেশি সেখানে দিনের বেলায় প্রখর সূর্যকিরণে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে দ্রুত অনেক ওপরে উঠে গিয়ে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘের সৃষ্টি করে। পরে ওই মেঘে উপস্থিত জলকণাগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে ক্রমশ বড়াে হয় ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠে পরিচলন বৃষ্টিরুপে নেমে আসে। 

উদাহরণ: নিরক্ষীয় অঞলে সারাবছর ধরে বিকেলের দিকে এই বৃষ্টি হয়।

2. শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত: ধারণা: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতের গায়ে প্রতিহত হয়ে পর্বতের গা বেয়ে ওপরে উঠে গিয়ে ক্রমশ শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই বৃষ্টিপাত শৈললাৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। 

পদ্ধতি: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় পর্বতে বাধা পেলে পর্বতের ঢাল বেয়ে ওপরের দিকে ওঠে এবং ওপরে উঠে প্রসারিত ও শীতল হয়। এর ফলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এরপর পর্বত অতিক্রম করে ওই বায়ু বিপরীত দিকের অনুবাত ঢাল বেয়ে ওপর থেকে নীচে নামে বলে উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে জলীয় বাম্প ধারণ করার ক্ষমতাও বেড়ে যায়। এজন্য পর্বতের অনুবাত ঢালে ও এর সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত খুব কম হয় এবং বৃষ্টিচ্ছায় অঞল তৈরি হয়।

উদাহরণ: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়র। প্রভাবে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢালে প্রচুর পরিমাণে শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়। তবে এই পর্বতমালার পূর্ব ঢাল এবং সন্নিহিত এলাকাসমূহে বৃষ্টিচ্ছায় অল সৃষ্টি হয়েছে। [ii] মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি, মৌসিনরামে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রবল। শৈলােৎক্ষেপ বৃষ্টি হলেও খাসি পাহাড়ের উত্তর দিকে অর্থাৎ অনুবাত ঢালে অবস্থিত শিলং বৃষ্টিচ্ছায় অঞলে পরিণত হয়েছে ।

3. ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত: 

ধারণা : বাতাসের ঘূর্ণন গতির জন্যে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই বৃষ্টিপাত ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। 

পদ্ধতি :

[i] ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত: ক্রান্তীয় অঞলে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে চারপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে শীতল ও ভারী বায়ু নিম্নচাপের কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। কিন্তু কেন্দ্রে প্রবেশ করার আগেই ওই বায়ু কুণ্ডলাকারে ঘুরতে। ঘুরতে প্রবলবেগে ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে এই প্রকার বৃষ্টিপাত ঘটায়। 

উদাহরণ: সমুদ্রসংলগ্ন ক্রান্তীয় অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। 

[i] নাতিশীতোষ্ণ অঞলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত : নাতিশীতোষ্ণ অঞলে শীতল ও উবায়ু পরস্পরের অভিমুখে প্রবাহিত হলে উয় বায়ু হালকা হওয়ায় শীতল বায়ুর ওপর উঠে যায় এবং দুটিভিন্নধর্মী বায়ুর মাঝে সীমান্ত (Front) তৈরি হয়। উয় বায়ু ক্রমাগত ওপরে উঠতে থাকায় বায়ুর মধ্যে থাকা জলীয় বাষ্প শীতল ও | ঘনীভূত হয় এবং সীমান্ত বরাবর ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত ঘটায়।

উদাহরণ : উষ্ণ নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলে এই প্রকার বৃষ্টিপাত হয়।

9.বিশ্ব উম্নয়নের প্রভাবগুলি লেখো।

Ans:- বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব (Effects of Global Warming) : মানুষের বিভিন্ন প্রকার অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপ, যেমন— অত্যধিক পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যবিনাশ, কৃষিকাজে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়ন প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে চলেছে এবং তার ফলস্বরূপ নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা এরূপ ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলা হয় । বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী । যেমন —

(১) মেরু অঞ্চলের বরফের গলন ও পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের গলন : ভূমণ্ডলের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মেরু অঞ্চলের বরফের স্তর ও পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহের গলন ঘটবে ও সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে । ফলস্বরূপ সমুদ্র উপকূলভাগের নীচু অংশ জলমগ্ন হবে, উপকূলবর্তী অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত ও অনুর্বর হয়ে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং সমগ্র সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে ।

(২) সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি : বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রের জলের যোগান বৃদ্ধি পাবে ও সমুদ্র জলপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে । বিজ্ঞানীদের মতে বর্তমানে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ১° সে. বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা প্রায় ১০ থেকে ১৫ সেমি. বৃদ্ধি পেয়েছে । এর ফলে পৃথিবীর নিম্ন উপকূল অঞ্চলসমূহ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কম উচ্চতাসম্পন্ন দ্বীপগুলি সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হবে ।

(৩) অধঃক্ষেপণের প্রকৃতির পরিবর্তন : বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ফলে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে উঠবে । ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পাবে ও ভৌমজলের ভাণ্ডারে টান পড়বে । এইভাবে অধঃক্ষেপণের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটবে ও সমগ্র বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে ।

(৪) শস্য উৎপাদনের বৈষম্য : বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বৃষ্টিপাতের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটবে, বৃষ্টিপাতের বন্টনেও চরম অসাম্য দেখা দেবে । ফলে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাবে । অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি দীর্ঘায়িত হয়ে কৃষিজ ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে ।

(৫) কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন : ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে বায়ুমণ্ডল শুষ্ক হয়ে অনাবৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে । ফলে বৃষ্টিপাতনির্ভর কৃষি এলাকাগুলিতে সেচব্যবস্থানির্ভর চাষবাস শুরু হবে । আর্দ্র কৃষি প্রণালীর পরিবর্তে পৃথিবীব্যাপী শুষ্ক কৃষি ও মিশ্র কৃষি পদ্ধতির প্রসার ঘটবে ।

(৬) এল নিনো সৃষ্টি ও পৃথিবীব্যাপী তার প্রভাব : স্পেনীয় শব্দ ‘El Nino’ কথার অর্থ Christ Child বা শিশু খ্রীষ্ট । বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বভাগে পেরু ও ইকুয়েডরের পশ্চিম উপকূল দিয়ে কোনো কোনো বছর খ্রিষ্টমাসের সময় প্রচন্ড উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহের ফলে আবহাওয়ার যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে, তাকে এল নিনো বলা হয় । এল নিনোর প্রভাবে, (i) পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশসমূহে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে । ফলে খরা পরিস্থিতির উদ্ভব হয় । (ii) পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধের উষ্ণতা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায় ।  (iii) দক্ষিণ আমেরিকার পেরু উপকূলে সামুদ্রিক মৎস্যের আহরণ উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।

(৭) পৃথিবীতে আগত ও বিকিরিত তাপের বৈষম্য : বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীতে আগত সূর্যরশ্মি ও পৃথিবী থেকে বিকিরিত সৌরতাপ শক্তির পরিমাণের মধ্যে বৈষম্য ঘটে । ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বাজেটের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় । ফলে খরা ও বন্যা, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ও দাবানলের প্রকোপ বহুগুণ বৃদ্ধি পায় । যেমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে ভয়ংকর টর্নেডো ঘূর্নিঝড় এবং অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের প্রাদুর্ভাব বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে ।

লা নিনা কী ? স্পেনীয় শব্দ ‘La Nina’ কথার অর্থ হল ‘ক্ষুদ্র বালিকা’ । প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্বভাগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা স্বাভাবিকের তুলনায় ৪° সে. কমে গেলে দক্ষিণ আমেরিকা পেরু, ইকুয়েডর উপকূল বরাবর কোনো কোনো বছর যে অতি শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়, তাকে লা-নিনা বলে । প্রভাবে ভারতে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয় ।

10.জলচক্রের বিবরণ দাও।

Ans:- 1. বাষ্পীভবন

সূর্য হল শক্তির চূড়ান্ত উৎস, এবং এটি পৃথিবীর বেশিরভাগ বাষ্পীভবনকে শক্তি দেয়। বাষ্পীভবন সাধারণত ঘটে যখন জলাশয়ের পৃষ্ঠের জলের অণুগুলি উত্তেজিত হয়ে বাতাসে ওঠে। সর্বোচ্চ গতিশক্তি সম্পন্ন এই অণুগুলো জলীয় বাষ্পের মেঘে জমা হয়। বাষ্পীভবন সাধারণত পানির স্ফুটনাঙ্কের নিচে হয়। ইভাপোট্রান্সপিরেশন নামক আরেকটি প্রক্রিয়া ঘটে যখন গাছের পাতার মধ্য দিয়ে বাষ্পীভবন ঘটে। এই প্রক্রিয়া বায়ুমণ্ডলে একটি বড় শতাংশ জল অবদান.

2. পরমানন্দ

পরমানন্দ ঘটে যখন তুষার বা বরফ জল না হয়ে সরাসরি জলীয় বাষ্পে পরিবর্তিত হয়। এটি সাধারণত শুষ্ক বাতাস এবং কম আর্দ্রতার ফলে ঘটে। পর্বতশৃঙ্গে পরমানন্দ লক্ষ্য করা যায়, যেখানে বায়ুর চাপ বেশ কম। নিম্ন বায়ুচাপ তুষারকে জলীয় বাষ্পে পরিণত করতে সাহায্য করে কারণ প্রক্রিয়াটিতে কম শক্তি ব্যবহার করা হয়। পরমানন্দের আরেকটি উদাহরণ হল সেই পর্যায় যেখানে শুকনো বরফ থেকে কুয়াশা ভেসে আসে। পৃথিবীতে, পরমানন্দের প্রাথমিক উত্স হল পৃথিবীর মেরুগুলিকে আবৃত বরফের চাদর থেকে।

3. ঘনীভবন

উচ্চ উচ্চতায় পাওয়া কম তাপমাত্রার কারণে বায়ুমণ্ডলে জমে থাকা জলীয় বাষ্প শেষ পর্যন্ত শীতল হয়ে যায়। এই বাষ্পগুলি জল এবং বরফের ক্ষুদ্র ফোঁটায় পরিণত হয়, অবশেষে মেঘ তৈরি করতে একত্রিত হয়।

4. বৃষ্টিপাত

0 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে, বাষ্পগুলি জলের ফোঁটায় ঘনীভূত হবে। যাইহোক, এটি ধুলো বা অন্যান্য অমেধ্য ছাড়া ঘনীভূত হতে পারে না। তাই, জলীয় বাষ্প কণার পৃষ্ঠে নিজেকে সংযুক্ত করে। যখন পর্যাপ্ত ফোঁটা একত্রিত হয়, তখন এটি মেঘের বাইরে এবং নীচের মাটিতে পড়ে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় বৃষ্টিপাত (বা বৃষ্টিপাত)। বিশেষ করে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বা অত্যন্ত নিম্ন বায়ুচাপে, জলের ফোঁটা জমাট বেঁধে তুষার বা শিলাবৃষ্টি হয়ে পড়ে।

5. অনুপ্রবেশ

বৃষ্টির পানি অনুপ্রবেশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটিতে শোষিত হয়। জল যে উপাদানে প্রবেশ করেছে তার উপর ভিত্তি করে শোষণের মাত্রা পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিলা মাটির তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম জল ধরে রাখবে। ভূগর্ভস্থ জল স্রোত বা নদী অনুসরণ করতে পারে। কিন্তু কখনও কখনও, এটি আরও গভীরে ডুবে যেতে পারে, জলজ তৈরি করে।

6. রানঅফ

যদি বৃষ্টিপাতের পানি জলজ গঠন না করে, তবে এটি মাধ্যাকর্ষণ অনুসরণ করে, প্রায়শই পাহাড় এবং পাহাড়ের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়; অবশেষে নদী গঠন করে। এই প্রক্রিয়াটিকে রানঅফ বলা হয়। শীতল অঞ্চলে, যখন তুষারপাতের পরিমাণ বাষ্পীভবন বা পরমানন্দের হারের চেয়ে দ্রুত হয় তখন আইসক্যাপ তৈরি হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আইসক্যাপ মেরুতে পাওয়া যায়।

তাই দেড়ি না করে এই পোস্টের নীচে দেওয়া Download লিংকে ক্লিক করে দশম শ্রেণি ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় বায়ুমণ্ডল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf download । Class 10 Geography 2nd chapter Question Pdf, মাধ্যমিক ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর PDF ডাউনলোড করো নাও এবং প্রতিদিন বাড়িতে বসে প্রাক্টিস করে থাকতে  থাকো। ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ Note ও প্রতিদিন মকটেস্ট দিতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করো।

PDF Download Link – Click Here

Join Our Group

Join Telegram