আজ আমি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিয়ে এসেছি 6টি সেরা অনুপ্রেরণামূলক গল্প বা মোটিভেশনাল গল্প যা শিক্ষার্থীদের জীবন পরিবর্তন করতে বা জীবন পাল্টে দিতে বা জীবনে অভ্যাস পরিবর্তন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে সাহায্য করবে। অবশ্যই আজকের এই অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ো।
ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বাংলা মোটিভেশনাল গল্প
যেমন কর্ম তেমন ফল:
যে যেমন করে তার কাছেই তা ফিরে আসে গল্পটি একজন কৃষকের যে প্রতিদিন একটি রুটির দোকানে এক কেজি করে পনির বিক্রি করতো এবং এক কেজি করে রুটি কিনে আনতো। রুটির দোকানদার এর সাথে তার অনে পুরোনো পরিচয় হওয়ায় দোকানদার তার থেকে পনির নেয়ার সময় আর মাপ দেয়ার প্রয়োজন মনে করতো না এবং কৃষকও তার থেকে এক কেজি রুটি কোন মাপঝোপ ছাড়াই নিয়ে চলে যেতো। তো একদিন পনিরের দোকানে এক নতুন কর্মচারী চাকুরি নিলো, কৃষক যখন তার পনির বিক্রি করতে আসলো তখন সে পনির কৃষকের থেকে নেয়ার পর সেটা ওজন করে দেখলো। ওজন করতে গিয়ে দেখা গেলো পনির এককেজির চেয়ে ১০০ গ্রাম কম আছে। সে তার দোকান মালিককে ঘটনা জানালো এবং দোকানদার খুব রেগে গেলো এবং পরের দিন কৃষক আসার পর সে তাকে খুব বকাঝকা করলো।
সে বাজারে বিচার ডেকে নালিশ করলো যে কৃষক তাকে ঠকিয়ে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে কম পনির দিয়েছে। তখন বিচারক কৃষকের কাছে এই চুরির কারন জানতে চাইলো । তখন কৃষক বললো – “আমি খুব গরীব মানুষ হুজুর, কিন্তু চোর নই। আমার বাসায় পরিমাপ করার কোন পাল্লা নেই, তাই প্রতিদিন রুটির দোকান থেকে যে ১ কেজি রুটি নিয়ে যাই সেটি দিয়েই ওজন করে দোকানদারকে সমপরিমান পনির দিয়ে যাই। তাই আমার জানা ছিলনা যে এখানে ১০০ গ্রাম রুটি কম ছিল। এরপর অনুসন্ধান করে কৃষকের কথা সত্য প্রমাণিত হলো এবং দোকানদার সবার সামনে লজ্জিত হলো ।
গল্পের শিক্ষাঃ যেমন কর্ম তেমন ফল।
মোটিভেশনাল গল্প: 10টি অনুপ্রেরণামূলক গল্প।Motivational story in bengali।10টি মোটিভেশনাল গল্প
নিজেকে বদলাতে শিখুন
একবার এক রাজা চোখের সমস্যা নিয়ে খুবই বিপদে ছিলেন। তাই রাজা অনেক জায়গায় যাচ্ছেন কিন্তু কোনো ভাবেই চোখ ভাল করতে পারছে না। পরে সে রাজা সন্ধান পেলেন তার রাজ্যের বনে এক সন্ন্যাসি থাকেন। যে সন্ন্যাসী সব ঠিক করে দিতে পারে। তারপর রাজা গেলো সেই সন্ন্যাসীর কাছে গিয়ে বললো সন্ন্যাসী আমার চোখের সমস্যা ঠিক করে দিন। সন্ন্যাসী দেখে বললো রাজা আমি আপনার সমস্যা বুঝতে পেরেছি। আপনি এক কাজ করুন এখন থেকে শুধু লাল জিনিসের উপর চোখ দিবেন। শুধু লাল রঙ দেখবেন, তারপর দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। রাজা বললো আচ্ছা ঠিক আছে। রাজা রাজ্যে ফিরে গিয়ে তার রাজপ্রাসাদ পুরোটা এবং সবকিছু লাল রঙ করে ফেললো। কিছুদিনপর আস্তে আস্তে রাজার চোখ ভালো হতে লাগলো। তখন রাজা খুশি হয়ে তার সৈন্যদেরকে বললো যাও সেই সন্ন্যাসীকে নিয়ে আাাসো আমি তাকে পুরস্কৃত করতে চাই। তারপর সন্ন্যাসী যখন আসলেন তখন সৈন্যরা বালতি ভরে লাল রঙ দিয়ে তাকে ভিজিয়ে দিলো। তারপর সন্ন্যাসী রাজার কাছে গেলো, রাজা তাকে জিজ্ঞাস করলো- “কেমন আছেন?” তখন সেই সন্যাসী বললেন- “দেখতেই তো পাচ্ছেন”, তিনি রাগান্বিতস্বরে বললেন, “রাজা আপনি আমাকে এমন লাল রঙ দিয়ে রঙ্গিন দিতে বললেন কেনো”?
পরে রাজা বললেন- “কেনো আপনিইতো
বলেছেন লাল রঙ দেখতে, রং না দিলে পরে
আপনাকে দেখলেতো আমার চোখে সমস্যা হবে তাই।
“ তখন সন্ন্যাসী বললেন- “রাজা আপনিতো একটা লাল চশমা পরলেই পারতেন৷” তখন
রাজা বললেন- “আরে সত্যিইতো!” রাজা লজ্জায় পরে গেলেন।
তারপর সন্ন্যাসী বললো- “দেখেছেন রাজা আমরা সমস্যায় পরলে আশে পাশের সব কিছু
পরিবর্তন করতে চাই কিন্তু সমস্যার সমাধান যে আমাদের ভিতরই আছে তা লক্ষ করিনা”।
আমরাদের নিজেদের বদলাতে বড় বড় কোনো দেশে যেতে হবে না নিজের দেশে থেকেই
নিজেকে বদলাতে পারবো। আমার বদলালে আমাদের পরিবার বদলাবে, আমদের সমাজ বদলাবে আর সমাজ বদলালে আমাদের দেশ বদলে যাবে।
গল্পের শিক্ষাঃ আমরা নিজেদের অনেক সমস্যা গুলো চাইলেই নিজের মধ্যে সামান্য পরিবর্তন এনে প্রতিকার করতে পারি।
জার ও জীবনের গল্প
একজন শিক্ষক একদিন তার ক্লাসে একটি কাচের জগ এবং তিনটি প্যাকেট নিয়ে ঢুকলেন। প্যাকেটে কি ছিল দেখা যাচ্ছেনা। শিক্ষক প্রথমে জগটি টেবিলের উপর রেখে তাতে পাথর এর টুকরো ভরা শুরু করলেন। এবং জগটির গলা পর্যন্ত ভরে ফেললেন। তখন ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করলেন। জগটি কি ভরে গেছে??সবাই একত্রে উত্তর দিল জ্বী স্যার, ভরে গেছে। তখন শিক্ষক বলেলেন অপেক্ষা করো। তিনি ২য় প্যাকেটটি থেকে ছোট ছোট নুড়ি পাথর বের করলেন এবং ঢালতে শুরু করলেন এবং উপচে পরা পর্যন্ত ভরতে থাকলেন। নুড়ি গুলো বড় পাথরের ফাকা গুলোতে গিয়ে জায়গা দখল করে নিল। তিনি বললেন এখন বলো তো জগটি পুরোটি ভরেছে??তখন ছাত্ররা বলেন, জ্বী স্যার। এবার পুরোটি ভরেছে। শিক্ষক এবারও বললেন অপেক্ষা করো। তখন তিনি তার আরেকটি প্যাকেট থেকে বালি বের করে জগটিতে বালি ঢালতে শুরু করলেন। বালির ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্র কণা গুলো জগে পাথর ও নুড়ি পাথরের মধ্যে থাকে সামান্য ফাকা গুলও দখল করে নিয়ে জগটি ভরে ফেললো। এবার শিক্ষক নিজেই বললেন এবার জগটি সম্পূর্ণ ভরেছে। এবার শিক্ষক বললেন এই জগটি হচ্ছে আমাদের জীবনের মতো। এই বড় পাথর গুলো হচ্ছে আমাদের পরিবার, আর এই নুড়ি পাথর গুলো হচ্ছে আমাদের ক্যারিয়ার এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমূহ । এবং সব শেষের ক্ষুদ্র বালি কণা হচ্ছে ইগো, রাগ, ঝগড়া এর মতো ক্ষতিকর আপ্রয়োজনীয় জিনিশ। যদি তোমোরা সর্বপ্রথম বালি দিয়ে তোমাদের জগটি ভরে ফেলো তবে, প্রয়োজনীয় পাথর এবং নুড়ি পাথরের জন্য যেমন জায়গা অবশিষ্ট থাকবেনা, তেমনি জীবনে রাগ, ইগো, নেগেটিভিটি দিয়েভরে ফেললে পরিবার, কর্মজীবন এবং সুখ শান্তিরও কোন জায়গা থাকেনা।
গল্পের অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষাঃ জীবনের প্রায়োরিটি লিস্ট সঠিক ভাবে নির্বাচন করার মধ্যে জীবনের সুখ শান্তি ও সফলতা নির্ভর করে।
জ্ঞানীর দেওয়া সমস্যার সমাধান
একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি তার আস্তানায় ধন্যমগ্ন থাকতেন। এবং বিকেলের সময় তিনি বিভিন্ন মানুষের সমস্যার কথা শুনে তাদের বিভিন্ন উপদেশ দিতেন এবং সমস্যা সমাধানের উপায় বলে দিতেন। কিছু লোক সমাধান জানার পরও প্রায়ই একই সমস্যা নিয়ে তার কাছে বারংবার আসতে শুরু করলো। এসে কান্নাকাটি করতো। একদিন জ্ঞানী ব্যাক্তিটি তাদের একটি কৌতুক বললেন, উপস্থিত সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। কয়েক মিনিট পর আবার সেই একই কৌতুক বললেন, এবার অল্প কিছু লোক
হাসলো। যখন তিনি একটুপর তৃত্বীয়বারও একই কৌতুক বললেন কেউই হাসলো না। তখন তিনি বললেন- “তোমরা একই কৌতুকে বার বার হাসতে পারোনা, তবে একই সমস্যায় বার বার কেন কাঁদো?”
গল্পের অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষাঃ দুশ্চিন্তা, হায়-হুতাশ করা শুধুমাত্র শক্তি এবং সময় অপচয়। এটি কখনো সমস্যার সমাধান করতে পারেনা।
শেকলে বাধা হাতি
একদা এক বাচ্চা ছেলে তার বাবার কাছে বায়না ধরলো সে সার্কাস দেখতে যাবে। বাবা তাকে সার্কাস দেখাতে নিয়ে গেলেন। সার্কাস শুরুর আগে বাবা তার ছেলেকে সার্কাসের তাবুর বাইরে রাখা বিভিন্ন পশু পাখির খাঁচার সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে পশুপাখি দেখাচ্ছিলেন। দেখতে দেখতে তারা হাতির সামনে চলে আসলো। তারা দেখতে পেল হাতিটি খাঁচায় বন্দী করে রাখার বদলে একটি চিকন শিকল দিয়ে পায়ে বাধা আছে, যেটি হাতি চাইলেই ছিড়ে পালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো হাতিটি সে চেষ্টাই করছেনা। এটি দেখে ছেলে খুব অবাক হলো বং তার বাবাকে এর কারন জিজ্ঞাসা করলো। বাবা হাতির মাহুতকে(রক্ষণাবেক্ষণকারী) ডেকে এর কারন জিজ্ঞাসা করলেন। হাতির মাহুত
উত্তর দিল – যখন এই হাতি গুলো অনেক ছোট ছিল, তখন আমরা তাদের এই সাইজের শিকল দিয়েই বেধে রাখতাম। সে সময় তারা তা ছেঁড়ার অনেক চেষ্টা করতো এবং ব্যার্থ হতো। সে বয়সে এই শিকল তাদের আটকে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ অবস্থায় যখন তারা বড় হতে থাকে তারা বিশ্বাস করে নেয় যে এই শিকল ছেঁড়া কখনোই সম্ভব নয়। তাই এখন তারা এই শেকল এর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হলেও তাদের বিশ্বস এর কাছে তারা বাধা পরে আছে এবং তা ছিঁড়তে চেষ্টা করেনা।
গল্পের অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষাঃ সফল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো এটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা যে আপনি সফল হবেন। বাধা যতই আটকে রাখতে চেষ্টা করুক, সফলতার বিশ্বাস মনে নিয়ে নিজের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
থিংক আউট অফ দ্যা বক্স
গল্পটি শত বছর পূর্বে ইতালির একটি ছোট শহরের একজন ব্যাবসায়ীর মেয়ের বুদ্ধিদীপ্ত কাজের। একজন বৃদ্ধ ব্যাবসায়ী তার ব্যাবসার জন্য শহরের একজন রক্তচোষা মহাজনের থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন । কিন্তু কিন্তু কয়েক বার টানা লোকসান হওয়ায় এবং মহাজনের সুদের টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে বেরে যাওয়ায় ব্যাবসায়ীর জন্য টাকা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যায়। সে সময় মতো টাকা পরিশোধ করতে পারছিলো না। এমন সময় মহাজন বললো সে এক শর্তে সকল কর্জ মাফ করে দিবে, যদি ব্যাবসায়ী তার মেয়েকে মহাজনের সাথে বিয়ে দেয়। মহাজন মানুষ হিসেবে ভাল ছিল না তাই ব্যাবসায়ীর প্রস্তাবটি পছন্দ হয়নি। তখন মহাজন বললো ঠিক আছে তাহলে চলুন আমরা আপনার বাগানে থাকা সাদা এবং কালো নুড়ি পাথর দিয়ে একটি ভাগ্য পরীক্ষা করি। আমি এই বাগানের পাথুরে রাস্তা থেকে একটি সাদা এবং একটি কালো পাথর নিয়ে একটি ব্যাগে রাখবো। সেখান থেকে আপনার মেয়ে একটি পাথর তুলবে। যদি সে কালো পাথরটি তোলে তবে সে আমাকে বিয়ে করবে এবং আপনার সব ঋণ আমি ছেড়ে দিবো এবং সে যদি সাদা পাথরটি তোলে সে ক্ষেত্রেও আমি আপনার ঋণ মওকুফ করে দিবো কিন্তু আপনার মেয়ের আমাকে বিয়ে করতে হবেনা। এমন সময় মহাজন যখন বাগানের রাস্তাটি থেকে নুড়ি পাথর থলেতে রাখার জন্য তুলছিল তখন মেয়েটি দেখে ফেলে যে, মহাজন একটি সাদা এবং একটি কালো পাথরে বদলে দুইটিই কালো পাথর নিয়ে ব্যাগে রেখেছিল। এই
অবস্থায় মেয়েটির সামনে তিনটি পথ ছিল-
১. ব্যাগ থেকে পাথর বাছাই করতে অস্বীকার করা।
২. ব্যাগ থেকে উভয় নুড়ি পাথর বের করে নিয়ে মহাজনের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করে ফেলা।
৩. ব্যাগ দুইটিই কালো পাথর আছে জেনেও একটি পাথর তুলে বাবার স্বাধীনতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা।
কিন্তু এই প্রতিটি পদক্ষেপেই তার এবং তার বাবার জন্য বিপদ ডেকে আনতো। কিন্তু মেয়েটি যা করলো তাতে মহাজন বোকা বনে গেল।